দোহাজারী–কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ (রেল ট্র্যাক বসানো) শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ১০২ কিলোমিটারে রেললাইনের শেষে কিছু কিছু জায়গায় ক্লিপ লাগানোসহ ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
এখন দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল রানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ট্রায়াল রানের জন্য কালুরঘাট সেতুর মেরামতের কাজ (পাটাতন খুলে ফেলার আগে) শুরুর আগে পটিয়ায় ৬টি বগিসহ ইঞ্জিন নিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন ট্রায়াল রানের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিপত্তি বাধে, ট্রায়াল রানের জন্য পটিয়ায় যে ৬টি বগি নিয়ে রাখা হয় সেগুলো শোভন চেয়ার (নন এসি)। এই গরমের মধ্যে এসি বগি ছাড়া দীর্ঘ ১০২ কিলোমিটার ট্রায়াল রান দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে কালুরঘাট সেতু এলাকায় কাঠের পাটাতনসহ ট্র্যাক বাসানোর কাজ শেষ করে ট্রেন চালানোর উপযোগী করে তোলার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী। এই মাসের মধ্যে মেরামতের কাজ শেষ হলে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল ট্রেন সেতুর উপর দিয়ে কক্সবাজার যাবে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন আজাদীকে বলেন, ট্রায়ালের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে ১২ নভেম্বর উদ্বোধন হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন। ট্রায়াল রানের জন্য পটিয়ায় যে ৬টি বগিসহ ইঞ্জিন এনে রাখা হয়েছে, এগুলো শোভন চেয়ার। শোভন চেয়ার দিয়ে তো ট্রায়াল রানের উদ্বোধন করা যাবে না। তবে লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ট্রায়ালের জন্য আমরা প্রস্তুত।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের ১০২ কিলোমিটার ট্র্যাক বাসানোর কাজ গত সোমবার শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের (কিছু কিছু জায়গায় ক্লিপ, ওয়েল্ডিং) কাজ চলছে। মেইন লাইন ১০২ কিলোমিটারে রেল ট্র্যাক বসে যাওয়ায় এখন বড় ধরনের কোনো কাজ নেই। কয়েকবার ট্রায়ালের পর ট্রেন চলতে পারবে। এর মধ্যে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজও শেষ হয়ে যাবে। ট্রেন চলাচলের মতো স্লিপার এবং রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ হবে। তখন সেতুর উপর দিয়েই ট্রায়াল ট্রেন যেতে পারবে।
তিনি বলেন, এখন আমরা জনবল নিয়ে কাজ করছি। আপাতত বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে স্টেশনগুলোতে লোকবল দেওয়া হবে। আস্তে আস্তে নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত আজাদীকে বলেন, ইতোমধ্যে কালুরঘাট সেতুতে ট্র্যাক বসানোর কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। ১৫০ থেকে ১৮০ ফুট ট্র্যাক বসানো হয়ে গেছে। চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে পুরো সেতু এলাকায় ট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ করে ট্রেন চালানোর উপযোগী করে তুলব। বুয়েটের পরামর্শকদল সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শনে বেশ কয়েকবার এসেছেন। তারা সেতুর সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন এবং সংস্কার কাজ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বুয়েটের অধ্যাপক ড. আ ফ ম সাইফুল আমিনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের পরামর্শক দল ও রেলওয়ের প্রকৌশলীগণ যৌথভাবে সংস্কার কাজ পর্যবেক্ষণ করেন।
উল্লেখ্য, ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সেতুটি সংস্কারের পর চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কক্সবাজারে ট্রেন চালুর জন্য শত বছরের জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতুটি বুয়েটের বিশেষজ্ঞদলের টিমের পরামর্শে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করছে রেলওয়ে।
গতকাল সরেজমিনে সেতু এলাকায় দেখা যায়, সেতুর পুরনো সব পাটাতন খুলে ফেলা হয়েছে। প্রায় অর্ধেকের মতো নতুন পাটাতন লাগানো হয়েছে। চলতি অক্টোবরে মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে সেতুর সব পাটাতন লাগানো শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী এবং সেতুর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। পাটাতনসহ রেল ট্র্যাক (রেললাইন) বসানোর কাজ শেষ হলে প্রথমবারের মতো সেতুর দুই পাশে পথচারী পারাপারের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, কালুরঘাট সেতু ট্রেন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৩১ সালে। এর ৩১ বছর পর ১৯৬২ সালে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
এদিকে ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত রেলপথ উদ্বোধন করবেন। ওইদিন তিনি উপস্থিত থেকে এ পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।