সাম্প্রতিক সময়ে সফলতার সাথে ১০টি ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন এবং হৃদরোগ বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্পন্দন’র উদ্বোধন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেছেন, হৃদপিণ্ড বা হার্ট এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা আপনাকে সুস্থ রাখতেই হবে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের রোগ হলে চিকিৎসার সময় পাওয়া যায়, কিন্তু হৃদরোগ সময় দেয় না। তাই হৃদরোগীদের নিয়মিত চেকআপের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে। অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে আমরা চেষ্টা করছি বিশ্বমানের সেবা দিতে। হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি চালুর পর ১০টি সফল অপারেশন সম্পন্ন করেছেন আমাদের চৌকস কার্ডিয়াক সার্জারি বিশেষজ্ঞরা। আমরা রোগীদের হাসিমুখে ঘরে ফেরাতে চাই।
তিনি আরো বলেন, ওপেন হার্ট সার্জারির ক্ষেত্রে সার্জারি পরবর্তী জীবনযাপন পরিবর্তন করতে হবে। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন সার্জারি পরবর্তী ভালো ফল পাওয়া যাবে না। আমার পরিবারে আমার বাবা (একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক) একজন ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী। আজ থেকে একযুগ আগে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে উনার হার্টের সার্জাারি হয়। শুধুমাত্র নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে উনি আজ পর্যন্ত সুস্থ আছেন। কাজেই যারা ওপেন হার্ট সার্জারি করেছেন, আপনাদের সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়ম মেনে জীবন যাপন করতে হবে।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী বলেন, চিকিৎসা হচ্ছে সুস্থ থাকার একটা মাধ্যম মাত্র। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতাটা জরুরি। হৃদরোগ প্রতিরোধ ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের উদ্যোগে ‘স্পন্দন’ নামের একটি ওয়েবসাইট চালু করেছি আমরা। এই ওয়েবসাইট থেকে হৃদরোগ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে। যা রোগী ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলবে। আসলে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই অনেক দেরি করে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক এম এ মালেক বলেন, ওপেন হার্ট সার্জারির বিষয়ে আমি আপনাদের আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। গত ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। সে সময় আমার যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, তার ১০ ভাগের ১ ভাগ খরচে এখন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে হার্টের সার্জারি হচ্ছে। একটি বিশ্বমানের হাসপাতালে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকে সবই আছে এখানে। আরেকটি বিষয় আমি বলতে পারি, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে প্রয়োজন ছাড়া আইসিইউ ও সিসিইউতে রোগীদের রেখে অনৈতিক প্র্যাকটিস হয় না এবং ভবিষ্যতেও হবে না। কাজেই আপনারা এই হাসপাতালের ওপর আস্থা রাখতে পারেন।
হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এ এন রাও বলেন, চট্টগ্রামবাসী তথা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে হৃদরোগ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ‘স্পন্দন’ নামের ওয়েবসাইট তৈরি করেছি। এই ওয়েবসাইটে ফ্রি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে প্রত্যেকে পাবেন একটি ভার্চুয়াল মেম্বারশিপ কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় হৃদরোগ বিষয়ক তথ্য, ফ্রি ডায়েট চার্ট এবং ফিজিওথেরাপি বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. সাইফুর রহমান সোহেল, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. আমানুর রহমান খান, ডা. শাখাওয়াত হোসাইন ও চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. প্রকাশ কেএন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে সার্জারি সম্পন্ন করা ৮ রোগী। তারা প্রত্যেকে হাসপাতালের সেবা ও সার্জারি খরচের বিষয়গুলো উল্লেখ করে চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এর আগে হৃদরোগ বিষয়ক ওয়েবসাইট স্পন্দনের উদ্বোধনের মাধ্যমের অনুষ্ঠান শুরু হয়।