চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের ৬ দিন আগে গতকাল মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন কমিশনের সকলে পদত্যাগ করেছেন। ফলে সমিতির পূর্ব নির্ধারিত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে না। আওয়ামীপন্থী সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব এবং বিএনপি–জামায়াতপন্থী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন বাতিলের আবেদনের প্রেক্ষিতেই নির্বাচন পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের এ পদত্যাগ। সমন্বয় পরিষদ ও ঐক্য পরিষদের দুটি আবেদনই সমিতির গঠনতন্ত্র বহির্ভূত, পদত্যাগপত্রে এমনটাই উল্লেখ করেছেন পদত্যাগকারী নির্বাচনী কর্মকর্তারা।
নির্বাচনমুখী দুটি পক্ষের দু’রকম চাওয়ার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনই পণ্ড হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুরো নির্বাচন কমিশনই পদত্যাগ করেছে। এবারের নির্বাচন ঘিরে এর আগেও দু’বার নির্বাচনী কর্মকতাদের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। একবার আমরা নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করি। আরেকবার পুনর্গঠন করি। সমিতির
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এখন আর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার সুযোগ নেই। তৃতীয় বারের মতো পদত্যাগের ঘটনায় আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পণ্ড হয়ে গেল, এটা একদমই নিশ্চিত হয়ে গেছে। আমরা আগামীকাল (আজকে) একটি সমিতির সভা করব। ১১ ফেব্রুয়ারিও আমরা সভা করব। আমাদের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটা এডহক কমিটি করতে হবে। এ এডহক কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে একটি নির্বাচনের আয়োজন করবে।
১৩২ বছরের চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এ বছরের নির্বাচনকে ঘিরে শুরু থেকেই নানা ঘটনা ঘটে আসছে। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। বারের ইতিহাসে যা এর আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেননি আইনজীবীরা। এবারের নির্বাচনের জন্য সর্বপ্রথম গত ৩০ ডিসেম্বর ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কয়েকদিন যেতে না যেতেই এ কমিশন থেকে গত ৫ জানুয়ারি মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ দুজন পদত্যাগ করেন। কমিশনে অগণতান্ত্রিক সরকারের সমর্থকরা অন্তর্ভুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে এ দুজন পদত্যাগ করেছিলেন। এ ঘটনার পর সমিতির পক্ষ থেকে গত ৯ জানুয়ারি নতুন করে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
সমিতিসূত্র জানায়, কয়েকদিন যেতে না যেতে নতুন করে গঠিত এ নির্বাচন কমিশন থেকেও পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। গত ১২ জানুয়ারি মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ তিনজন পদত্যাগ করেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি সমিতির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। এতে আইনজীবী মোহাম্মদ সোলায়মানকে মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়। আইনজীবী উত্তম কুমার দত্ত, সামশ্রী বড়ুয়া ও মো. নুরুদ্দীন আরিফ চৌধুরীকে নির্বাচনী কর্মকর্তা করা হয়।
সমিতিসূত্র জানায়, সর্বশেষ গঠিত এ নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছিল। সবকিছু ঠিকঠাকই হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ৬ দিন আগে পুনর্গঠনকৃত এ নির্বাচন কমিশনের সবাই আজকে (গতকাল) পদত্যাগ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বারের (জেলা আইনজীবী সমিতি) ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল, নজিরবিহীন। বলা হচ্ছে, স্বাধীনতার পর এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এর আগে ঘটেছে কিনা সে বিষয়ে রেকর্ড নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রায় ১৩২ বছরের পুরনো জেলা আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি আর কখনো দেখা যায়নি।
নির্বাচনে ঐক্য পরিষদ মনোনিত সাধারণ সম্পাদকপ্রার্থী মো. হাসান আলী চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সমন্বয় পরিষদ থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন চাওয়াতে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে। আমরা কমিশনের কাছে কোন আবেদন করে নি। কমিশন কেন বলছে যে, আমরা আবেদন করেছি, তা বলতে পারছি না। সমন্বয় পরিষদ মনোনীত সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের প্রতি হুমকি রয়েছে, তাই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। অন্যদিকে ঐক্য পরিষদ আমাদের মনোনয়ন বাতিলের জন্য আবেদন করেছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এসব আবেদনকে ‘অজুহাত’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে পদত্যাগ করেছেন।