১০ দফা আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে

নগরে বিএনপির গণমিছিলে খন্দকার মোশাররফ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা এদেশের মানুষের ১০ দফা দাবি উথাপন করেছি। এই দাবি উথাপন করার পর যারা সরকারকে পছন্দ করে না, যারা গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক, সকল দল, গোষ্ঠী, ব্যক্তি এই ১০ দফার পক্ষ নিয়ে সেগুলোকে সমর্থন করেছে। যুগপৎ আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য আমরা প্রথম কর্মসূচি পালন করছি।

গতকাল বিকালে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন ওয়াসা মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির গণমিছিলের পূর্ববর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেনন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন ও সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া।

দুপুর ১টা থেকে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা থেকে নেতাকর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে এসে ওয়াসা মোড়ে জড়ো হন। এরপর সমাবেশ শেষে গণমিছিল আলমাস, কাজীর দেউড়ি, নুর আহমেদ সড়ক, লাভলেইন, জুবিলি রোড হয়ে তিন পুলের মাথায় গিয়ে শেষ হয়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের মানুষের রায় হচ্ছে, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই ১০ দফা আমাদের যে দাবি তা পূরণ করতে হবে। এই স্বৈরাচারী সরকার আপোষে তা মেনে নিবে না। তাই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে। বীর চট্টলার মানুষ ফয়সালা রাজপথে করার জন্য প্রস্তুত। এ সময় তিসি ‘আপনারা প্রস্তুত তো?’ প্রশ্ন করলে নেতাকর্মীরা হাত তুলে ‘প্রস্তুত প্রস্তুত’ বলে স্লোগান দেন।

তিনি বলেন, কর্মসূচিকে অনুসরণ

করে সারা বাংলাদেশ রাস্তায় নেমে পড়বে এবং সরকারকে বিদায় করে দিয়ে রাস্তা থেকে ফিরে যাবে। তাই তাদেরকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনে বাধ্য করতে হবে। এই বাধ্য করার আন্দোলনের সূচনা হচ্ছে গণমিছিল। এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। তাই দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার জনগণের সরকার নয়, জনগণের ভোট দিয়ে নির্বাচিত নয়। তাই এই সরকারের দেশের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সেজন্য আজকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ধ্বংস করে দিয়েছে।

মোশাররফ বলেন, এই সরকার লুটেরা সরকার, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি এবং দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকারের কারণে আজকে অর্থনীতির এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারে না। তার জন্য আজকে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরিব মানুষ না খেয়ে থাকছে, মধ্যবিত্ত আরো গরিব হয়ে গেছে। আগে যেখানে দারিদ্রের সীমা ২০ শতাংশের নিচে ছিল, এই সরকারের দুর্র্নীতি ও অর্থনীতি ধ্বংস করার কারণে সেই দারিদ্রের সীমা ৪০ শতাংশে উঠে গেছে। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। বিভাগীয় সমাবেশ থেকে জনগণ আমাদেরকে রায় দিয়েছে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তারা এদেশে গণতন্ত্র আসতে দিবে না। অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না। তারা বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে এই দেশে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতাদের মুক্তির দাবিতে আমরা ১০ দফা প্রদান করেছি। এই ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য সারা দেশে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল। আপনারা যেভাবে বিভাগীয় গণসমাবেশ চট্টগ্রাম থেকে সফলভাবে শুরু করেছিলেন, তেমনিভাবে এই গণমিছিল গণসমুদ্রে রূপান্তর করেছেন।

মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, কিছুদিনের মধ্যে একটা হুইসেল দিবে। সেই হুইসেল মানে সরকার পতনের হুইসেল। তখন লাখ লাখ জনতার রাজপথ দখল করতে হবে। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের বলে নির্বাচন নাকি করতে দিবে না। আমরা নির্বাচন করব, সেই নির্বাচনে জয়ী হব। সেই ভয়ে আজকে সরকারের হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেছে। আগামী হুইসেলের জন্য অপেক্ষা করেন, দেখবেন সকালে উঠে তারা সবাই পালিয়ে গেছে। আবার জনতা ক্ষমতায় আসবে।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, সারা দেশে ১০টি গণসমাবেশ নানা বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ সফল করেছে। আজকের এই গণমিছিলের একটি স্লোগান উঠেছে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফার মাধ্যমে অবিরাম সংগ্রাম শুরু হয়েছে।

এস এম ফজলুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সরকারে আছে। এই ফ্যাসিবাদি সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার তারা ছিনতাই করেছে।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ এখন প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু এসব করে আওয়ামী লীগের শেষ রক্ষা হবে না।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকের গণমিছিল প্রমাণ করেছে জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা জনগণ নিয়ে সমাবেশ করব। আর আওয়ামী লীগ বিরানির প্যাকেট দিয়ে সমাবেশে মানুষ আনে। এই হচ্ছে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য। আমরা মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। সরকারের জেলজুলুমহুলিয়ার বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে।

গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, এম এ হালিম, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, এরশাদ উল্লাহ, এনামুল হক এনাম, নুরুল আমিন, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, সালাউদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, সরওয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল মোস্তফা আমিন, এস এম মামুন মিয়া, মুজিবুর রহমান, জামাল হোসেন প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণমিছিলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন মীর নাছির
পরবর্তী নিবন্ধজমিতে বিদ্যুতের তার, মা মেয়ের মৃত্যু