চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা সীমান্তের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা শঙ্খনদী। নদীর চর ও উভয় উপজেলার তীরবর্তী অঞ্চলে পুরো বছর জুড়েই চাষ হয় নানা প্রজাতির সবজি। যুগের পর যুগ ধরে হাজারো পরিবারের জীবন–জীবিকা জড়িত শঙ্খনদীর চরে সবজির চাষের উপর। পরিবারগুলোর ছেলে–মেয়েদের পড়ালেখার খরচসহ যাবতীয় খরচ আসে চাষাবাদ থেকেই। পুরো শঙ্খের চর জুড়ে এখন চলছে শীতকালীন সবজির আবাদ। চলবে আরো দেড় থেকে দুই মাস। এখন শীতকালীন সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়া যাচ্ছে মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ। শীতের শুরুতে এবং মাঝামাঝি সময়ে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া গেলেও বর্তমানে অধিকাংশ সবজির মূল্য নেমেছে ১০ টাকার নিচে। বর্তমানে প্রতিকেজি মূলা, ফুলকপি ও ধনেপাতা পাইকারি বাজারে ৭ থেকে ৮ টাকা এবং প্রতি পিস বাঁধাকপি ৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে টমেটো ও শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫–১৬ টাকায়। তবে কাঁচা মরিচ এখনো ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান কৃষকরা।
গতকাল শনিবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র। অথচ মাত্র এক মাস আগেও পাইকারি বাজারে এসব সবজি বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণ–তিনগুণ দামে।
শঙ্খচরের কৃষক মোহাম্মদ মারুফ জানান, তিনি ৩০ শতক (দেড় কানি) জমিতে মূলার চাষ করেছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতের প্রতি পিস মূলার ওজন কমপক্ষে ২ থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হবে। সম্প্রতি মূলার দাম কমে যাওয়ায় তিনি এসব মূলা বিক্রি করতে পারছেন না। ক্ষেত থেকে তুলে ধুয়ে মুছে গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা পর্যন্ত প্রতি কেজি মূলায় খরচ পড়ছে কমপক্ষে ১০ টাকা। বিক্রি করে খরচও না উঠায় তাই তিনি আপাতত মূলা বন্ধ রেখেছেন। তবে শীতের শুরুতে প্রতি কেজি মূলা ৫০ টাকার বেশি বিক্রি করতে পেরেছিলেন বলে জানান তিনি। শঙ্খচরের অপর কৃষক মোহাম্মদ হাসান জানান, বর্তমানে প্রতিকেজি ফুলকপি ৭ থেকে ৮ টাকার উপরে বিক্রি করা যাচ্ছে না। একই পরিস্থিতি বাঁধাকপিতেও। তাই তিনিও সবজি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
রেলওয়ে স্টেশন ময়দানের পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা একাধিক কৃষক জানান, পাইকাররা সকালে এসে আগে নিজেরাই ঠিক করে নেয় কোন সবজি কোন দামে কিনবে। তারপর তাদের নির্ধারণ করা দামেই তারা সবজি কিনে নেয়। সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরাও পাইকারদের বেধে দেয়া দামে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার জানান, এ অঞ্চলে প্রতি মৌসুমে শীতকালীন সবজির ভালো ফলন হয়। শেষের শেষে এসেও প্রতিটি সবজির ক্ষেত হরেক রকম সবজিতে ভরপুর রয়েছে। শীতের শুরুতে সবজিতে কৃষকরা ভালো লাভবান হলেও এই সময়ে এসে দাম অনেকাংশে কমে গেছে। তাই সংরক্ষণ করতে না পেরে বর্তমানে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ অঞ্চলে হিমাগার নির্মাণের ব্যাপারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ–পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারী ও সীতাকুণ্ডে দুটি হিমাগার নির্মাণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছিল দুই বছর আগে। এ সম্পর্কিত একটি প্রজেক্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাস হয়ে আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোহাজারীতে একটি হিমাগার নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে দোহাজারী অঞ্চল থেকে বাঁধাকপি রপ্তানি করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছিল। রপ্তানিকারকরা যে টাকায় বাঁধাকপি রপ্তানি করতে ইচ্ছুক তাতে রাজি নয় এ অঞ্চলের কৃষকরা। রপ্তানিকারকদের প্রস্তাবিত দামের চেয়ে চট্টগ্রামে আরো বেশি দামে বাঁধাকপি বিক্রি করতে পারায় কৃষকরা বাঁধাকপি রপ্তানি করতে রাজি হননি। অন্যদিকে রপ্তানিকারকরা দোহাজারী অঞ্চলের কৃষকদের দেয়া দামের চেয়ে চুয়াডাঙ্গাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে আরো কম দামে বাঁধাকপি সংগ্রহ করে রপ্তানি করতে পারায় এ অঞ্চল থেকে বাঁধাকপি রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি।