১০ করণীয় ঠিক করে দিল মন্ত্রণালয়

মশক নিয়ন্ত্রণ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) ‘ব্যর্থ’ বলে দাবি করছেন সাধারণ লোকজন। নগরে ‘দিনে ও রাতে’ মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ সিটি মেয়র। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ জন্য ‘বিব্রত’ বলেও জানান মেয়র। এ অবস্থায় মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর জন্য ১০টি করণীয় ঠিক করেছে মন্ত্রণালয়। করণীয়গুলো বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য চলতি বছরের প্রথম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত সভাটির কার্যবিবরণী। মার্চ মাসের পর থেকে সারা দেশে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়াও ম্যালেরিয়াসহ নানা মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির আশংকা প্রকাশ করা হয় সভা থেকে। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে করণীয়গুলো ঠিক করা হয়।
করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, সিটি কর্পোরেশন মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সারা বছরের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। কর্পোরেশনকে মশক নিধনে ব্যবহৃত কার্যকর কীটনাশক এবং যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। রুটিন অনুযায়ী ফগিং, এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে। এ জন্য দক্ষ জনবল নিয়োজিতকরণ নিশ্চিত করতে হবে কর্পোরেশনকে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগে জনগণ ও পরিবেশের জন্য যাতে ক্ষতিকর না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
করণীয়গুলোর মধ্যে জনসচেতনতা তৈরির উপর জোর দেয়া হয়। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সাব-জোনে ভাগ করতে হবে। এরপর সকল শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। গঠিত কমিটির তালিকা স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে হবে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচারসহ অন্যান্য প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। বাসা-বাড়িতে লার্ভা জন্মানোর উপযোগী স্থানে বাসিন্দাগণ যাতে স্ব-উদ্যোগে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় সে জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
অন্যান্য করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রাক-মৌসুম সার্ভে পরিচালনা করতে হবে এবং প্রাপ্ত তথ্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করবে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল নির্ধারণপূর্বক তা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। ডেঙ্গু সনাক্ত রোগীদের বাসস্থানের সঠিক তথ্য সিটি কর্পোরেশন সমূহকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
অপরিষ্কার ছাদবাগানের ফুলের টবের পানিতে লার্ভা দমন প্রতিরোধে নিয়মিত কেরোসিন দেয়ার জন্য প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা যেন এডিশ মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও করণীয় ঠিক করা হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, ইচ্ছেকৃতভাবে এডিস মশার প্রজননের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের অধিযাচন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি। রমজানে মুসল্লিরা যাতে মশার কামড় থেকে রক্ষা পায় সে জন্য মসজিদে মসজিদে ফগিং করা হচ্ছে। মশার লার্ভা যাতে বেড়ে না যায় সে জন্য খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। এ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন খালে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সেখানে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকায় মশার লার্ভা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের করণীয় ঠিক করে দেয়ার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। মোজম্মেল হক নামে বাকলিয়া এলাকার এক বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন ব্যর্থ। মশার কামড়ে আমরা অতিষ্ঠ। আমাদের কাছ থেকে ট্যাঙ আদায় করে কর্পোরেশন। অথচ সামান্য মশা থেকে রক্ষা করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। তবে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় যে বিষয়টি আমলে নিয়েছে সেটা খুশির খবর। মন্ত্রণালয় যে করণীয় ঠিক করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন করলে কিছুটা সুফল হয়তো পাব। তবে মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে যেন নির্দেশনাগুলো কর্পোরেশন শতভাগ বাস্তবায়ন করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ বছর পর হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ
পরবর্তী নিবন্ধনগরীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলবে দুপুর একটা পর্যন্ত