চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের আনাগোনা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। একইসাথে জেনারেল কার্গো বার্থের সবগুলো কন্টেনার জেটি জাহাজশূন্য হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও বার্থিং পাওয়ার জন্য যেখানে জাহাজগুলোকে হিমশিম খেতে হতো সেখানে বর্তমানে উল্টো দিনের পর দিন জেটিই খালি থাকছে। বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের ৪টি কন্টেনার জেটিতে গতকাল কোনো জাহাজ ছিল না। খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যাও আগের তুলনায় কমে গেছে। আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ কমছে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, বহির্নোঙরে একটিও অপেক্ষমাণ কন্টেনার ভ্যাসেল নেই।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরে ১৩টি সাধারণ বার্থ, চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) ৩টি জেটি, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে ৫টি জেটি, ২টি ডলফিন জেটি এবং ৬টি রিভার মুরিং জেটি মিলে বন্দরে একই সাথে ৩২টি–৩৩টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭টি মূল জেটির মধ্যে ১ নম্বর জেটি এখন আর হিসেবে ধরা হয় না। ২ থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত জেটির মধ্যে ১২ নম্বর জেটিতেও জাহাজ ভিড়ানো হয় না। সাধারণ কার্গো বার্থের ১১টিতে জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। এরমধ্যে ৭টি জেটিতে খোলা পণ্যবাহী জাহাজ এবং বাকি ৪টিতে কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। এছাড়া সিসিটির ২টি এবং এনসিটির ৪টি মিলে ১০টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ ভিড়ানো হয়। কিন্তু কন্টেনার জাহাজের চাপ বেড়ে গেলে জেনারেল কার্গো বার্থে একটি জেটি কন্টেনার জাহাজের জন্য দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গতকাল জেনারেল কার্গো বার্থের নির্দিষ্ট ৪টি জেটির একটিতেও কোনো জাহাজ ছিল না। জেনারেল কার্গো বার্থের খোলা পণ্যবাহী জাহাজের জন্য নির্ধারিত দুইটি জেটিও খালি রয়েছে। গতকাল দুইটি কন্টেনার জাহাজ বন্দরে ভিড়েছে। এগুলোর একটি সিসিটিতে এবং অপরটি এনসিটিতে বার্থিং করে।
সূত্র বলেছে, কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। খোলা পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা বেশ কিছুদিন ধরে কমে আসলেও কন্টেনার জাহাজের আনাগোনা মোটামুটি ছিল। প্রায় প্রতিটি কন্টেনার জেটিতেই জাহাজ নোঙর করতো। কিন্তু গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জাহাজের সংখ্যা একেবারে কমে যায়। সিসিটি আর এনসিটি মিলে মাত্র ছয়টি কন্টেনার জাহাজ অবস্থান করছে। বার্থিং এর অপেক্ষায় বহির্নোঙরে আর কোনো কন্টেনার জাহাজ ছিল না। স্বাভাবিক সময়ে এটি একেবারে অকল্পনীয় একটি ব্যাপার বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, করোনাকাল কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে কন্টেনার জাহাজের সংখ্যা এভাবে কমে যাওয়ার ঘটনা একেবারে নজিরবিহীন।
সূত্র বলেছে, বন্দরে ১০টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। এর মধ্যে গতকাল ৪টি জেটিই খালি ছিল। সিংগাপুর কলম্বো কিংবা মালয়েশিয়া থেকে কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরের জেটিতে বার্থিং নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ডলার সংকটের কারণে এলসির পরিমাণ একেবারে কমে যাওয়ায় পণ্য আমদানি কমেছে। একইভাবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে কমেছে রপ্তানিও। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক গতি থেকে ছিটকে পড়ায় বন্দরে জাহাজের আনাগোনা কমে গেছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, গত অর্থ বছরে মোট ৪ হাজার ২৫৩টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। তার আগের অর্থ বছরে এসেছিল ৪ হাজার ২৩১টি জাহাজ। চলতি অর্থবছরে যে হারে জেটি শূন্য থাকছে তাতে বছর শেষে এই সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।