১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টেও বহাল

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা

| বৃহস্পতিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১০ আসামির সবার সাজা বহাল রেখে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে গতকাল বুধবার এ রায় দিয়েছে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। এছাড়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান খান শাহিন, মোহাম্মদ শাহিন আহমেদ, মো. সাফায়েত জামিল, মো. আশিকুজ্জামান বাবু, সাদিয়া সুলতানা রত্নাও শুনানিতে অংশ নেন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসিরউদ্দিন। এছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন আমূল্য কুমার সরকার। মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, উপরিউক্ত সাক্ষীগণের সাক্ষ্য, জব্দকৃত আলামতসমূহের প্রমাণাদি, আসামিগণের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উচ্চ আদালতের সার্বিক পর্যালোচনায় আমরা মনে করি যে, ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে আসামিগণের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে কোনো আইনগত ভুল করেছে বলে মনে হয় না। কাজেই আমাদের নিকট উপস্থাপিত ডেথ রেফারেন্সটি গৃহিত হল। সেই সাথে আসামি কর্তৃক দায়েরকৃত জেল আপিল, ফৌজদারী আপিল খারিজ করা হল। এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদের দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশিরুল্লাহ। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত। এ আসমি রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেননি। তার জেল আপিলও হয়নি। ফলে তার সাজা বহাল আছে। এই আসামি জেলহাজতে আছেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
আর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৪ বছরের দণ্ড পাওয়া আরেক আসামি মফিজ ওরফে মহিবুল্লাহ সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সেই থেকে এই আসামি জেলহাজতে আছেন। তার অর্থ এই আসামি ইতিমধ্যে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। বিচারিক আদালত তাকে অত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। সুতরাং জেলকোড অনুযায়ী যদি এ আসামি তার উপর প্রদত্ত দণ্ড ইতোমধ্যে ভোগ করে থাকেন তাহলে তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হল। যদি না তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলার সম্পৃক্ততা থাকে। বিচারিক আদালতের রায়ে ১৪ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আসামি আনিসুল ওরফে আনিসের আপিলও খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে তার দণ্ড বহাল রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আসামিরা আপিল না করলে দণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশিরুল্লাহ।
২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা দায়ের করেন। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম রায়ে ১০ জঙ্গির প্রাণদণ্ড দেন। গুলি করে প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন বিচারক। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। রায়ের চার দিনের মাথায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য এ মামলার রায়সহ সব নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরিভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াশিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন, মো. রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই এবং মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর। এদের মধ্যে মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক রয়েছেন। এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
আর আসামি আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল উচ্চ আদালতে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডের রায়ের অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের উপর শুনানি শুরু হয়। পরে গত ১ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হলে হাইকোর্ট রায়ের এদিন ঠিক করে দেয়। সে অনুযায়ীই গতকাল বুধবার রায় দিল হাইকোর্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরো ৮২ জনের করোনা শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধমশা নিধনে ২০ দিনের ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ চসিকের