চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ভ্যাটের অফিসারদের মধ্যে যদি সততা ও দেশপ্রেম না থাকে, তাহলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। সংস্কার করতে হলে, সবার আগে নিজেকে সংস্কার করতে হবে। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে সংস্কার করতে পারব না, দেশের জন্য কিছু করতে পারব না।
গতকাল দুপুরে নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউর মেজবান হল এ চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট আয়োজিত জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ’র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, রেস্টুরেন্ট কিংবা মিষ্টির দোকানে সাধারণ মানুষ থেকে ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যারা প্রতিষ্ঠানের মালিক, তারা ভ্যাট দিচ্ছে না। বিষয়গুলো যারা ভ্যাট সংগ্রহ করতে যায়, তাদের তদারকি করা দরকার। দেশপ্রেম আর সততার জায়গায় আমরা যদি নিজেদের সংস্কার করতে পারি, তাহলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কেউ বলতে পারবেন না মানুষ ভ্যাট দিচ্ছে না। মিষ্টির দোকানের কথা আসছে। দোকানদার ঠিকই লাভবান হচ্ছে, কারণ তাদের থেকে আমরা ভ্যাট চালান নিচ্ছি না। রেস্টুরেন্ট থেকেও হয়তো আমরা ভ্যাট চালান নিই না। খেয়ে–দেয়ে খুব দ্রুত হেসে চলে আসি, আরও পারলে কিছু বকশিশ দিয়ে আসি। আমার মনে হয় না কেউ ভ্যাট চালান নেয়।
ভ্যাট আহরণ প্রক্রিয়া শুরু করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের ১০ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যখন ভ্যাট চালু করেছিলেন, তখন ওনাকে অনেকে পাগল মনে করেছিলেন। ওনি কি করছিলেন, তা তখন অনেকে বুঝতে পারেননি। অনেকে বলেছিলেন, উনি মানুষের পকেট কাটার চেষ্টা করছেন।
ডা. শাহাদাত বলেন, গত ১৬ বছরে উন্নয়নের নামে যা হয়েছে, ২৪ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। এ জায়গায় আমাদের রাজনীতিবিদদের একটা জায়গায় আসতে হবে।
সিটি কর্পোরেশনেও অটোমেশন চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা যে অটোমেশন সিস্টেম চালু করেছেন, এটি খুবই চমৎকারভাবে চলছে। আমিও চেষ্টা করছি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যে হোল্ডিং ট্যাক্সগুলো রয়েছে, সেগুলো একটি অটোমেশনের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়ে আসতে। যাতে তারা খুব সহজে দিতে পারে। এটি এতদিন কেন হয়নি, সেটা আশ্চর্য লাগছে। তাছাড়া আমি এই চট্টগ্রামকে গ্রিন ও হেলদি সিটি করার চেষ্টা করছি। এখানে হেলদি সিটি বলতে শুধু রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকাকে বুঝাতে চাই না। এ চট্টগ্রাম শহর হবে সকলের জন্য নিরাপদ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদ, চট্টগ্রাম কর অঞ্চল–১ এর ড. মো. সামছুল আরেফিন, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেটের কমিশনার মো. মাহফুজুল হক ভূঁঞা, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন ও চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদ। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে ভ্যাট দেওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে। মিষ্টির দোকান থেকে আমরা কত দ্রুত আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাবো, সেটাই চিন্তা করি। কিন্তু এখানে যে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে তা আমরা ভাবি না। এ জন্য ভ্যাট আহরণকারী কর্মকর্তারা বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। এর একটা কারণ হতে পারে সুশাসন। আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে কেউ যদি বাইরের দেশে তিনশ বাড়ি করে, আমরা স্বাভাবিক ভাবেই ভ্যাট দেওয়ার আগ্রহ হারাই। তাই সুশাসনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাট আহরণে যেসব সমস্যা আছে, তা থেকে মুক্তির পথ হলো অটোমেশন। অটোমেশন সিস্টেম পুরোপুরি চালু করলে ভ্যাট আহরণ প্রক্রিয়া ও আহরণ সহজ হবে।