হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৯২০–১৯৮৯)। বাংলা সংগীত জগতে এক সাড়া জাগানো নাম। তিনি একজন কিংবদন্তি কণ্ঠসংগীত শিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং প্রযোজক। মোহনীয় কণ্ঠের ছোঁয়ায় তিনি হয়ে উঠেছেন সংগীতের বরপুত্র, সুরের জাদুকর। তিনি রবীন্দ্র সংগীতের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী। এ ছাড়াও তিনি বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় গান গেয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ই জুন তার মাতামহের বাড়ি বারাণসী শহরে। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তার বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহে আকাশবাণীতে গান রেকর্ডিং করেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে হেমন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সংগীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকার জন্যে লেখেন। ১৯৩৭ সাল থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিদ্যায় অধ্যয়নরত। কিন্তু সুরের নিবিড় টানে সব কিছু হারিয়ে যেতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দেন হেমন্ত, আর গানই হয়ে ওঠে পরম আরাধনা। এরপর একে একে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর মৌলিক গানের রেকর্ড। প্রতিটি রেকর্ডই দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন, করেছেন সুর প্রযোজনা। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘অভিযাত্রী’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করে সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সাড়া জাগানো ছবি শাপমোচন, নীল আকাশের নিচে, হারানো সুর সহ অনেক বিখ্যাত ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁর গাওয়া অসংখ্য বিখ্যাত গানের মধ্যে রানার, কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা, ঝড় উঠেছে, মুছে যাওয়া দিনগুলি, আমার গানের স্বরলিপি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডি.লিট। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে সেপ্টেম্বর এই মহান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।