হেমন্ত বন্দনা

সৌভিক চৌধুরী | শনিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

শীতের পূর্বাভাস নিয়ে আসে হেমন্ত ঋতু। শরতের কাঁচা হলুদের মতো সোনালি রোদ প্রকৃতিতে বৈচিত্রময় সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে দিয়ে যায়, আর তাকে অনুসরণ করে হেমন্ত। হেমন্ত মানেই নব উচ্ছ্বাস, নব সুর, নব শিহরণ। পাকা ধানের ঋতু হিসেবে যার খ্যাতি। আবহমান কাল থেকে হেমন্ত নিয়ে আসে উৎসব আর আনন্দমুখর দিন। গ্রামের মাঠ প্রান্তর ভরে যায় হলুদাভ পাকা ধানে। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধে নির্মল বাতাস সুরভিত হয়ে ওঠে । এ যেন এক ‘নবান্ন’ উৎসব। মূলত ফসলের উৎসব এই পুরো ঋতুকে আবিষ্ট করে রাখে। কৃষকের শ্রমের ফসলে গ্রামবাংলা যখন ভরে ওঠে তখন প্রবাহিত হয় প্রাণচাঞ্চল্য। এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ ধান উৎপাদনের ঋতু হোলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম কার্তিকে এ ধান হয়ে ওঠে পরিপক্ক। ধানের আঁটি বেঁধে গরু কিংবা মোষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়োয়ানের কণ্ঠে উৎসারিত হয় ভাওয়াইয়া সঙ্গীত আর বাঁশির সুর মূর্ছনায় সৃষ্টি হয় হৃদয় নিংড়ানো এক অনুভূতি। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল। বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান তাঁর আঁকা অসংখ্য ছবিতে হেমন্তে কৃষকের ফসল তোলার দৃশ্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন গভীর মমতায়। হেমন্তের আবহে যেমন স্নিগ্ধ পেলবতার রেশ প্রবহমান, তেমনি হেমন্ত তার অবয়বে গহন উজ্জলতাও বহন করে আসছে অনন্তকাল ধরে। মনকে প্রফুল্ল করে তোলা যেন হেমন্তের এক বৈশিষ্ট্য। হেমন্তের বিভায় মুগ্ধ কবি জীবনানন্দ বর্ণনা করেছেন এভাবে- ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।’ অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় শীতের অনুভব। এ অনুভব প্রকৃতিকে নিয়ে যায় উজ্জল অবয়বে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই গানটিতে লিখেছেন ‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে/ হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে/ ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো দীপালিকায় জ্বালাও আলো / আপন আলো সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্য খাতে কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হোক
পরবর্তী নিবন্ধভাবতে হবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আগে