দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন চট্টগ্রামে–১৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র হিসাবে আওয়ামী লীগের দলীয় লোক, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৬৩জন প্রার্থী উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে নির্বাচনের হেভিওয়েট প্রার্থীরা সাংবাদিকদের কাছে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রত্যেকে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শতভাগ জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল : চট্টগ্রাম ৯ (কোতোয়ালী–বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল বিভাগীয় কমিশনার এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তোফায়েল ইসলামের হাতে মনোনয়পত্র জমা দেন। এসময় তার সাথে সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প রয়েছে তা ত্বরান্বিত করতে কাজ করবো। চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার পেতে ঢাকায় উচ্চ আদালতে যেতে হয়। এতে সাধারণ জনগণকে অনেক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। তাদের হয়রানি লাঘবে উচ্চ আদালতের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে কাজ করবো।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী : চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ তিনবারের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দেবব্রত দাশ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিজন চক্রবর্তী, চেয়ারম্যান মো. সেলিমসহ দলের সিনিয়র নেতারা। মনোনয়নপত্র জমা দানের পর হুইপ সামশুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমি পটিয়ায় গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছি, তা বিগত একশ বছরেও হয়নি। পটিয়ার আনাচেকানাচে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। পটিয়াবাসী চান আমি নির্বাচন করি। আমাদের দলের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন উৎসবমুখর হোক। জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে আসুক। আমি কেন্দ্রের সাথে কথা বলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছি। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি এই খবর পেয়ে পটিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন–ওয়ার্ডে নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করি পটিয়ার মানুষ বিগত সময়ের মতো এবারও আমাকে নির্বাচিত করবেন।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ : চট্টগ্রাম– ৫ আসনে হাটহাজারী সংসদীয় আসনে গতকাল সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মসিউজ্জামানের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় চাঁদাবাজকে প্রশ্রয় দিইনি। এলাকায় শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এছাড়া রাস্তাঘাট, হালদা নদী ভাঙনরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি। আমি আশা করি, বিগতদিনের কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে আবারও এলাকাবাসী আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।
এম এ লতিফ : চট্টগ্রাম ১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ গতকাল বিভাগীয় কমিশনার এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তোফায়েল ইসলামের হাতে মনোনয়পত্র জমা দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় দল, জাতির পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ ও নৌকাকে প্রতিহত করার শক্তি কারও নেই। আমার নির্বাচনী এলাকার মতো এত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের আর কোথাও হয়নি। বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল এসেও চট্টগ্রাম–১১ আসনে এম এ লতিফকে পরাজিত করতে পারবে না।
মাহফুজুর রহমান মিতা : চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা গতকাল চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান মাইন উদ্দীন মিশন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বেদন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ–সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম ও মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে প্রথমে সন্দ্বীপবাসীর জন্য নিরাপদ নৌ যাতায়াতের ব্যবস্থা করব। ইতোমধ্যে এটির কাজ শুরু হয়েছে।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী : চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল মামুনের হাতে মনোনপত্র দেন তিনি। এ সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ দক্ষিণ জেলা ও পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়ন জমাদান শেষে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমাদের দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখতে হবে। নৌকার পক্ষে সবাই এক হয়ে কাজ করবো, এই শপথ নিতে হবে। কোনো অজুহাতেই নৌকার বিরোধিতা ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার মত অপ্রত্যাশিত কমকাণ্ড কোনো মুজিব সৈনিক করতে পারে না।
মাহবুব রহমান রুহেল : চট্টগ্রাম–১ (মীরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১ টায় তার পিতা সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিকে সাথে নিয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা জেরিনের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার পিতা যেভাবে মানুষের সুখে দুখে উন্নয়নে সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, আমিও যেন ঠিক তেমনি মানুষের পাশে থাকতে পারি। দেশের জন্য ভালো ও কল্যাণকর কিছু যেন করতে পারি। মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, এর আগে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী নুরুল করিম আবছার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
নোমান আল মাহমুদ : চট্টগ্রাম ৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েেেছন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। গতকাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে আমি বর্তমান সময়ের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।
মহিউদ্দিন বাচ্চু : চট্টগ্রাম ১০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। গতকাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের মনোনয়পত্র জমা দেয়ার সময় দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা তার সাথে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক সেটা আমি চাই। আমি চাই সব দল নির্বাচনে আসুক। আমার আসনে মনজুর আলম সাহেব দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমার মুরুব্বি। স্বতন্ত্র হোক বা অন্য দলের সবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দরকার।
মোহাম্মদ মনজুর আলম : চট্টগ্রাম–১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার পক্ষে ছেলে মোহাম্মদ নিজামুল আলম, মোহাম্মদ সরোয়ার আলম, মোহাম্মদ ফারুক আজম, মোহাম্মদ সাইফুল আলম, মোহাম্মদ সাহিদুল আলম, প্রস্তাবকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাদি, সমর্থনকারী আব্দুল করিম চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার দপ্তরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
এম এ সালাম : চট্টগ্রাম–৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম গতকাল রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মাইনুদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুদৌলা চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোহাম্মদ আলী। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিজয়ী হলে এলাকা ও জনগণের উন্নয়নে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাবো।