অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগের সূত্র পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ। কর্মকর্তাদের দাবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ ও হরতালের সময় (২৬ থেকে ২৮ মার্চ) হেফাজত যে সহিংসতা চালিয়েছে, তার পেছনে দলে ঢুকে পড়া এই উগ্রবাদীদের ‘মদদ’ রয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম গতকাল রোববার বলেন, হেফাজতের ‘মানহাজি’ গ্রুপটির মধ্যে বেশ কয়েকজন আফগান ফেরত ব্যক্তি রয়েছেন। তারা উগ্রপন্থায় আস্থা রাখেন। তাদের ইন্ধনেই মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলে সহিংসতা চালায় হেফাজত। এই আফগান ফেরত যোদ্ধাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) কয়েকজন সাবেক সদস্যও রয়েছেন। এরকম বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গত ১৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, হেফাজতের মধ্যে যারা ‘মানহাজি’, তারা ওই সহিংসতার পক্ষে ছিলেন বলে মামুনুল জানিয়েছেন। মামুনুল হকের সঙ্গেও পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেন, এখনও মামুনুলের একজন নিকটাত্মীয় পাকিস্তানে থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তবে এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে টাকার উৎসের সন্ধান করা। ব্যাংকের মাধ্যমে মামুনুলের ছয় কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়ার দাবি আগেই করেছিল পুলিশ।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, এই অর্থের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে দুবাই হয়ে। তবে এটা যে দুবাই থেকেই পাঠানো হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। আরও অন্যান্য মাধ্যমেও টাকা আসতে পারে। এসবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জঙ্গিদের সঙ্গে মামুনুল হকের যোগাযোগ ছিল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মামুনুল হকের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্কের কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাকেও এসব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়া গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ‘তলোয়ার নিয়ে’ জাতীয় সংসদ ভবনে হামলার ‘পরিকল্পনা এবং তাতে উসকানি’ দেওয়া অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সিটিটিসি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে ২২ বছর বয়সী আবু সাকিব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। আর আলী হাসান ওসামা নামে অন্যজন একজন উগ্রবাদী বক্তা। এর মধ্যে ওসামা হেফাজতের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর হাতে হাত রেখে ‘বায়াত’ নিয়েছিলেন বলে জানান সিটিটিসির কর্মকর্তারা। আনুষ্ঠানিক বায়াত নেওয়ার ছবিও পেয়েছে পুলিশের এই বিভাগ।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জুনায়েদ বাবুনগরীর ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ওসামা ও সাকিবকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিটিটিসি। এছাড়া তাদের যোগাযোগগুলোর খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছেন কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার হওয়া এই দুজন কীভাবে সংসদ ভবন এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তা জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এছাড়া সাকিব সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যে কামারের কাছ থেকে তলোয়ারটি বানিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তিকেও খুঁজে বের করেছে পুলিশ।