হেফাজতের কর্তৃত্ব বাবুনগরীর হাতে

হাটহাজারী প্রতিনিধি | সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

সব জল্পনা কল্পনা ও উৎকণ্ঠার অবসান গঠিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন গতকাল রোববার হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষা ভবনে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্বে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং ২য় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যে সম্মেলনে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির এবং নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলটি। দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টা থেকে দেশের আট বিভাগের ৬৪ জেলার হেফাজতের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। সকাল ১০টায় প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। সাড়ে ১০টার দিকে উপস্থিত হন হেফাজত ইসলামের সদ্য সাবেক মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। পরে তিনি উদ্বোধনী বক্তব্যে হেফাজতের বিগত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে নতুন কমিটি গঠনের জন্য সিনিয়র আলেমদের নিয়ে উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম জিহাদী, জুনায়েদ বাবুনগরী, নুর হোসাইন কাসেমী, ইয়াহহিয়া, আব্দুল আওয়াল, মাহফুজুল হক, জোনায়েদ আল হাবিব, মুফতি মনির হোসেন, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নাছির উদ্দিন মুনির ও আতাউল্লাহ হাবিবীকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করা হয়।
সাবজেক্ট কমিটির দীর্ঘ আলোচনার পর ২টা ১১ মিনিটে ২য় অধিবেশনে সভার সভাপতি আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর পক্ষে জামিয়া রহমানিয়া ঢাকার পরিচালক ও বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। নতুন কমিটিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং জামেয়া ইসলামিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মহাপরিচালক নুর হোসেন কাসেমীকে মহাসচিব ঘোষণা করেন।
কমিটিতে ৩২ জন সিনিয়র আলেমকে নায়েবে আমির, ৮ জন যুগ্ম মহাসচিব এবং ১৮ জন সহকারী মহাসচিবের নামও ঘোষণা করা হয়। এছাড়া মহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা করে ২৪ সদস্যের উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করা হয়। যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে একজন খেলাফতে মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক। শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলোন তিনি। ১৫১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্যে ১২০/২২ জনের নাম ঘোষণা করা হলেও বিভিন্ন পদে বাকিদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফী ছিলেন হেফাজতের আমির। তিনি ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালকও ছিলেন। ওই মাদ্রাসার শিক্ষক বাবুনগরী কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের মহাসচিব ছিলেন। এই বছরের মাঝামাঝি শফীর ছেলে আনাস মাদানির সঙ্গে দ্বন্দ্বে মাদ্রাসার পদ হারান বাবুনগরী। তবে হেফাজতের মহাসচিবের পদে থেকে যান।
ওই ঘটনার জের ধরে এক দল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বিক্ষোভের মুখে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন আহমদ শফী। তার ছেলে আনাস মাদানিকেও বরখাস্ত করা হয়। এরপর বাবুনগরী আবার মাদ্রাসার পদে ফেরেন।
হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব হারানোর পরদিনই আহমদ শফী মারা গেলে হেফাজতের আমিরের পদ শূন্য হয়। এই অবস্থায় শফীর অনুসারীদের বিরোধিতার মুখে বাবুনগরীরা গতকাল সম্মেলন আয়োজন করে নতুন কমিটি গঠন করেন। এই সম্মেলনে শফীর ছেলে আনাস মাদানিও আমন্ত্রণ পাননি।
হেফাজতের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণে সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার থেকে হাটহাজারীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। শনিবার দুপুরে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। কাউন্সিলে অংশ নিতে শনিবার বিকেল থেকেই আমন্ত্রিতরা আসতে শুরু করেন। তবে শফী অনুসারীরা উপস্থিত না থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেফাজতের শফীর অনুসারী নেতারা। তারা আগে থেকে বলে আসছিলেন, সংগঠনটির নেতৃত্ব ‘জামায়াত-বিএনপির’ হাতে যাচ্ছে। শফীর অনুসারীদের অভিযোগ, হেফাজতের সম্মেলনে তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, এই সম্মেলনের বৈধতা নেই। এদিকে, বাবুনগরীকে আমির করার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় নেমে আলোচনায় উঠে আসে হেফাজত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাল্টা কমিটির পথে পদবঞ্চিতরা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে সরাসরি ফ্লাইট চান সুজন