উত্তাল রণাঙ্গণে তখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। এরই মধ্যে ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি পেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সংযোজনে মিত্র বাহিনীর আক্রমণে তখন হানাদার বাহিনী দিশেহারা। পাকিস্তানিরা বুঝে গেছে তাদের পরাজয় কেবলই সময়ের ব্যাপার।
এদিন যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে জেনারেল নিয়াজি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাওয়ালপিন্ডি হেড কোয়ার্টারে। রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, সৈন্যরা দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। নিয়াজি লিখছেন, গত ১৭ দিনে যেসব খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে, তাতে জনবল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ শটকে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের নিজেদের ট্যাংক, ভারী কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। এ বার্তা পেয়ে হেড কোয়ার্টার থেকে সম্মুখ সমরের সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়। এদিন রাত ১০টায় ভারতীয় বেতার কেন্দ্র আকাশবাণী থেকে হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় জেনারেল মানেকশ বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য তোমাদের ঘিরে রেখেছে। তোমরা যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছ, তারা তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেরি হওয়ার আগেই তোমরা আত্মসমর্পণ করো।
বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুনের হয়ে একাত্তরের রণাঙ্গণের সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা বুঝতে পারছিল যে যুদ্ধের ময়দান থেকে তাদের পিছু হঠার সময় এসে গেছে। ৭ ডিসেম্বরের ওই গোপন বার্তা পেয়ে পাকিস্তান সরকারের মনোবল একেবারেই ভেঙে যায়। তারা কোনো না কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়েছে। তাদের মনোবলও তখন অনেক চাঙ্গা।