হৃদরোগের চিকিৎসায় পিছিয়ে চট্টগ্রাম

দরকার বিশেষায়িত হাসপাতাল বিশ্ব হার্ট দিবস আজ

জাহেদুল কবির | সোমবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগী বেশি। কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রামের মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে প্রধানত দায়ী করছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মানুষ ঐতিহ্যগত ভোজনরসিক। খাবারে অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার ও ভাজাপোড়া খাবার হৃদরোগের অন্যতম কারণ। চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের উচ্চ কোলেস্টেরল, মেদ বাহুল্য প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের হৃদরোগের প্রকোপ বেশি হলেও এখানে গড়ে উঠেনি হৃদরোগের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল। বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতালের হৃদরোগের চিকিৎসা চালু থাকলেও খরচের কারণে গরিব ও অসহায় রোগীরা সেখানে চিকিৎসা নিতে পারেন না। এসব রোগীর একমাত্র ঠিকানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। সেখানেও প্রায় সময় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ, তিন গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। ফলে প্রায় সময় হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। জানা গেছে, সারা বিশ্বে বিভিন্ন অসুখে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তার শতকরা ৩১ শতাংশ মারা যায় হৃদরোগের কারণে। তাই বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগকে এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ লাখ, শ্বসনতন্ত্রের রোগজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ লাখ, ক্যানসারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ৮২ লাখ।

চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চট্টগ্রাম মহানগর, বিভিন্ন উপজেলা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাংশের বিশাল জনগোষ্ঠী চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রায় ৪ কোটি মানুষের ভরসাস্থল হৃদরোগ বিভাগ। কিন্তু সে তুলনায় হৃদরোগ বিভাগের সুযোগসুবিধা বাড়েনি। এখনো অনেক রোগীকে ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে রোগীরা আরো বেশি উপকৃত হবেন। প্রাইভেট হাসপাতালে একজন রোগী যে চিকিৎসা পান, সেই চিকিৎসার আার্থিক মূল্য হিসাব করলে চমেক হাসপাতালে তার খরচ পড়ে পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ক্ষেত্রবিশেষে আরো কম। চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুর উদ্দিন তারেক আজাদীকে বলেন, চমেক হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। চট্টগ্রামে হৃদরোগ বিভাগের রোগীদের চাপ সব সময় বেশি থাকে। এ মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে ক্যাথল্যাবের। কিছুদিন আগে আমাদের একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। ফলে আমরা এনজিওগ্রাম ও রিং লাগাতে পারিনি।

অপরদিকে নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকার চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনে গত জুলাই থেকে চালু হয়েছে ১০ শয্যার করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) সেবা। ইতোমধ্যে পাহাড়তলী থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ২৩ শতক জমি বরাদ্দ পেয়েছে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন। হার্ট ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া জমিতে ১৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে আধুনিক ক্যাথল্যাব, ওপেন হার্ট সার্জারি ইউনিট, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং সিসিইউ স্থাপন করা হবে। তবে আরেকটি বিকল্প পরিকল্পনা হচ্ছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেইন গেটের অদূরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে, সেখানে ২০ শয্যার সিসিইউ ইউনিট স্থাপন। ওখানে হৃদরোগ ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ ও ক্যাথল্যাব থাকে। হৃদরোগের বিশেষায়িত সকল পরীক্ষা করানো যাবে। সরকারের উচ্চ মহল থেকে ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে।

চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ আজাদীকে বলেন, হৃদরোগের উচ্চ প্রকোপ ও বিশাল সংখ্যক হৃদরোগীর চিকিৎসাসেবায় চট্টগ্রাম এখনো অনেকটা পিছিয়ে। বিশেষ করে সরকারি পর্যায়ে হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগই এখনো সরকারি পর্যায়ের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র। তার ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি জনগোষ্ঠী। তুলনামূলকভাবে রাজধানী ঢাকায় সরকারি পর্যায়ের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ মোট ৭টি বিশেষায়িত হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার পরও চট্টগ্রামে নেই কোনো বিশেষায়িত সরকারি হৃদরোগ হাসপাতাল। বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলে এখানে কম খরচে আধুনিক হৃদরোগ সেবা আরো বিকশিত হতো। তবে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনে ১০ শয্যার সিসিইউ চালু হওয়ায় গরিব ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল হৃদরোগীরা এখান থেকে স্বল্পমূল্যে সেবা পাচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের কবরে আনজুমান ট্রাস্ট নেতৃবৃন্দের বিনম্র শ্রদ্ধা ও জিয়ারত
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা