পাহাড়ি কিশোরদের সাথে বন্ধুত্বের স্মৃতি ধরে রাখতে মুরগির খামারের কাজের ফাঁকে সেলফি উঠিয়েছিল রাউজানের কদলপুর গ্রামের কিশোর শিবলী সাদিক হৃদয়। সেই সেলফিতে বন্ধুত্বের ছদ্মবেশ ধারণকারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের যে হাসি, সেই হাসিতে যে শত্রুতা ছিল কেউ তা কল্পনাও করতে পারেনি। সহজ সরল নিষ্পাপ হৃদয়ও কোনো দিন কল্পনা করেনি বন্ধুত্বের ফাঁদে আটকিয়ে তাকে হত্যা করা হবে। এদিকে হৃদয় খুনের সাথে জড়িত পাহাড়ি সন্ত্রাসী গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছে গ্রামবাসী। হত্যা মামলায় পুলিশ তাদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হৃদয়ের এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাউজান কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ইলিয়াছ পোল্ট্রি ফার্মের কিশোর ম্যানেজার হৃদয় ছিল বন্ধুসুলভ স্বভাবের। ফার্মের কর্মচারী হিসাবে যোগ দেয়া সমবয়সী পাহাড়ি কিশোরদের সাথে গড়ে উঠেছিল তার বন্ধুত্ব। এক সময় খামারের দায়িত্ব পালনে অবহেলাজনিত কারণে ম্যানেজার হিসাবে তাদের সাথে তর্কেও জড়িয়েছিল। অনেকটা এক রোখা মনোভাবাপন্ন পাহাড়িরা এই ইস্যুতে চলে যায় ফার্মের চাকুরি ছেড়ে। পরে মালিকদের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা আবার খামারে যোগ দেয়। অতীতের সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলেছে ভাব করে তারা হৃদয়ের সাথে আবারো আগের মত বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে সুযোগ খুঁজছিল আগের বিরোধের প্রতিশোধ নেয়ার। সরল মনে হৃদয় তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে দাওয়াতও খাওয়ায়। কিন্তু খুনের নেশায় মত্ত পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এক সময় হৃদয়কে ফাঁদে আটকাতে নানামুখি কৌশল নেয়। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট রাতে ফার্ম থেকে অপহরণ করে। এই ঘটনার ১৩ দিন পর তার রক্ত মাংসহীন কঙ্কাল পুলিশ উদ্ধার করে গত সোমবার। গতকাল বুধবার হৃদয়ের কোনো বন্ধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ছবি পোস্ট করে। জানা গেছে, হৃদয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে কদলপুরের পূর্ব পার্শ্বের একটি দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায়। অনেকটা নিরিবিলি ওই পাহাড়ি এলাকায় কোনো জনবসতি নেই। যারা সেখানে লাশ উদ্ধারে পুলিশের সাথে ওই পাহাড়ের চূড়া উঠেছেন তারা বলেছেন ওই দুর্গম এলাকায় যে মানুষের বিচরণ রয়েছে সেই আলামত তারা দেখেছেন। তাদের ধারণা পাহাড়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা নিরাপদ আস্তানা হিসাবে এই জায়গা ব্যবহার করে থাকে।
কদলপুরের বর্তমান পরিস্থিতি : এদিকে হৃদয় খুনের সাথে জড়িত পাহাড়ি সন্ত্রাসী গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার ভয়ে গোটা কদলপুর ইউনিয়নের মানুষ গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছে। বিশেষ করে ঘটনাস্থলের কাছের বাড়ি সমূহের মানুষ পুলিশ আতংকে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে কারো কারো অভিযোগ পুলিশ নিরীহ মানুষ ধরে থানায় নিয়ে আপোষ রফার মাধ্যমে ছাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ হারুন বলেন, কদলপুরের গণপিটুনির মামলায় কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হয়নি। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ার ঘটনাও ঠিক নয়। তিনি বলেন, প্রথম দিন কয়েকজনকে পুলিশ আটক করলেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে হৃদয়ের কংঙ্কাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের হাতে দেয়া হলে গ্রামে এনে কবরস্থ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহত সন্ত্রাসীর লাশ তার পরিবারের সদস্যদের হাতে দেয়া হয়েছে বলে থানার ওসি জানিয়েছেন।