মুরগির খাদ্য (ফিড) বাইরে বিক্রি করতে বাধা দেওয়ায় কাল হয়েছিল রাউজানের কলেজ ছাত্র সিবলি সাদিক হৃদয়ের জন্য। এই নিয়ে তার সাথে সাত সহকর্মীর ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে নির্মম ভাবে খুন করা হয় হৃদয়কে। শুধু তাই নয়, লাশ যাতে শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য হত্যার পর শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলেছিল তারা। গত শনিবার নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামি উচিংথোয়াই মারমা (২৩) ও ক্যাসাই অং চৌধুরীকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে র্যাব সদস্যরা। র্যাবের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সিবলিকে বীভৎস কায়দায় হত্যার বিবরণ দেয় গ্রেপ্তার দুই আসামি। উচিংথোয়াই মারমা রাঙামাটি জেলার কাউখালির কলমপতি গ্রামের মংহ্লাজাই মারমার ছেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরী বান্দরবানের রুমার আশ্রম পাড়ার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম–৭ এর অধিনায়ক মো. মাহবুব আলম বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা ও অপহরণ মামলায় মোট ৯ থেকে ১০ জন জড়িত। এর মধ্যে দুজনকে র্যাব ও বাকি ছয়জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। প্রধান আসামি উমংসিং মারমাকে (২৬) সিবলির লাশ উদ্ধারের দিন ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে জনতা। বাকিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
র্যাব–৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক মো. মাহবুব আলম জানান, খামারকর্মীদের মধ্যে উচিং থোয়াইং মারমা প্রথমে ছুরি দিয়ে সিবলির গলা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। আর হাত পা চেপে ধরে উমংচিং মারমা ও ক্যাসাইং চৌধুরী মারমাসহ চার থেকে পাঁচজন। গ্রেপ্তার দুই আসামি র্যাবকে আরও জানায়, জনতার পিটুনিতে নিহত আসামি উমংসিং মারমা–ই গত ২৮ আগস্ট সিবলিকে অপহরণে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সে–ই ফোন করে সিবলিকে রাস্তায় আসতে বলে। তখন সে খামার থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। আসামিরা জোর করে সিএনজি টেক্সিতে তুলে তাকে। এ সময় সিবলি চিৎকার করলে মুখে গামছা বেঁধে দেওয়া হয়। তাকে অপহরণের পর উমংসিং মারমার ফোন থেকে সিবলির বাবাকে কল করা হয়। অপহৃত সিবলিকে দিয়ে তার বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর–কষাকষির একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। তবে অপহরণের পরদিন ২৯ আগস্ট হত্যা করা হয় সিবলিকে। এরপরও গত ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে সিবলির বাবা ও নানার কাছ থেকে মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা নেয় খুনিরা।
এর আগে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। জবানবন্দিতে তারা জানায়, খামারের কাজ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সিবলির সঙ্গে পাঁচ–সাতজন শ্রমিকের বাগ্বিতন্ডা হয়। এরপর থেকে সিবলির ওপর ক্ষুব্ধ ওই শ্রমিকেরা। তবে এ ঝগড়ার মীমাংসা করে দিয়েছিলেন খামারের মালিকেরা। কিন্তু ভেতরে–ভেতরে ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে।