হুমায়ূন কাদির একজন সমাজ সচেতন কথাশিল্পী। তাঁর রচনায় সমন্বয় ঘটেছে সমাজ বাস্তবতা, রোমান্টিক ভাবালুতা ও মনোবিশ্লেষণ। এই ত্রয়ীর সন্নিবেশে তাঁর সাহিত্যকর্ম পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা, অসাধারণ ব্যঞ্জনা।
হুমায়ূন কাদিরের পূর্ণ নাম সৈয়দ হুমায়ূন কাদির মুরতাজ আলী। জন্ম ১৯৩২ সালের ২৯-এ জুলাই মাদারিপুর জেলার গোপালপুর গ্রামে। বাবা এস.এন. কিউ জুলফিকার আলী ছিলেন সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জ্ঞানতাপস ও সাহিত্যানুরাগী হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। হুমায়ুন কাদিরের সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ শৈশব থেকেই। আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় নিয়মিত তাঁর কবিতা ছাপা হতো। কলেজে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন নিয়মিত, অভিনয় করতেন নাটকে। তাঁর গানের কণ্ঠও ছিল চমৎকার। নাটক, সংগীত, সাহিত্য – এই ত্রয়ীর আকর্ষণে মেধাবী হুমায়ূন প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলেন না। ব্যক্তিগত জীবনে নানা অসি’র পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অনিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে বি.এ পাস করেন এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এম.এ তে ভর্তি হন। এখানেই তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি। তাঁর কর্মজীবনের শুরু দৈনিক ‘সংবাদ’-এর বার্তা বিভাগে সাংবাদিকতার মাধ্যমে। পরবর্তীকালে অন্যান্য পত্রিকায় কাজ করলেও পাশাপাশি নিমগ্ন হন সাহিত্য সাধনায়। ছাত্রাবস্থা্য়ই অনেক ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন হুমায়ূন।
তাঁর রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘নির্জন মেঘ’, ‘আদিম অরণ্যে একরাত্রি’, ‘শীলার জন্যে সাধ’, ‘একগুচ্ছ গোলাপ ও কয়েকটি গল্প’ প্রভৃতি। ‘অরণ্য কথা বলে’, ‘জলটুঙ্গি’, ‘অচেনা মানুষ’, ‘সেই অনাদি’ ইত্যাদি তাঁর ছোটগল্প।
হুমায়ূন কাদির প্রচুর গানও রচনা করেছিলেন। কিন’ সেগুলো সুরারোপিত কিংবা গীত হয়েছিল বলে জানা যায় না।
ছোটগল্পের জন্য তিনি মরণোত্তর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালের ২০শে এপ্রিল সমাজ মনস্ক কথাশিল্পী হুমায়ূন কাদির প্রয়াত হন।