হুমায়ুন আজাদ – খ্যাতিমান কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, কিশোর সাহিত্যিক, ভাষাবিজ্ঞানী ও গবেষক। এই বহুমাত্রিক প্রতিভার পাশাপাশি তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়েছেন প্রথাবিরোধী ও স্বাতন্ত্র্যধর্মী লেখক হিসেবে।
হুমায়ুন আজাদের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের রাড়িখালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্মান ও এম.এ ডিগ্রি নিয়ে পরবর্তী সময়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনের শুরু চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর রচনার মৌলিকত্ব প্রথাবিরোধিতা। এবং অত্যন্ত সচেতনভাবেই তিনি সাহিত্যে গতানুগতিকতা পরিহার করেছেন। নিজস্ব চিন্তাধারার মধ্যেই এ দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির নানা সংঘাতের পরিচয় বিধৃত হয়েছে তাঁর লেখায়। হুমায়ুন আজাদের উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে: কবিতা ‘অলৌকিক ইস্টিমার’, ‘সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’, ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’; উপন্যাস ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’, ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে’, ‘শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার’, ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’, ‘রাজনীতিবিদগণ’, ‘ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ’; প্রবন্ধ ও সমালোচনা ‘নরকে অনন্ত ঋতু’, ‘আমার অবিশ্বাস’, ‘নির্বচিত প্রবন্ধ’, ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’, ‘তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান’, ‘নারী’, ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ ইত্যাদি। শেষের রচনা তিনটি প্রবল বিতর্কিত হয় এবং সরকারিভাবে এই গ্রন্থগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়। এক পর্যায়ে মৌলবাদীদের আক্রমণে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। হুমায়ুন আজাদের মননশীলতার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে শিশু সাহিত্যে। ‘লাল নীল দীপাবলি’, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’, ‘আব্বুকে মনে পড়ে’, ‘কতো নদী সরোবর’, ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’ প্রভৃতি তাঁর শিশুতোষ রচনা। হুমায়ুন আজাদ কবিতা লিখেছেন প্রচুর, কিন্তু কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে সাতটি। তাঁর কবিতা ছিল স্বপ্ন আর সুন্দরের যুগলবন্দি। সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে প্রয়াত হন হুমায়ুন আজাদ।