আমাদের বাড়ির উত্তরে মন্দির পুকুর। মন্দির পুকুরের পশ্চিমে শত বছরের পুরনো রেইনট্রি। তার উঁচুতে একেবারে গাছের মগডালে বাসা বাঁধলো ঈগল। সে কি প্রহরে প্রহরে ডাকে? শুনেছি পুরনো বাসার প্রতিই মোহো বেশি। পরে জেনেছি প্রজনন মৌসুমে নতুন ডালপালা দিয়ে বাসা সাজায়। খুব ছোট বেলায় ঈগলের উড়ে চলার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সে উড়ে উড়ে কোথায় যেন চলে যেতো। আবার উড়ে উড়ে এসে পোঁছাতো তার প্রিয় পুরনো বাসায়। অপার কৌতোহল নিয়ে ঈগলের উড়ে চলার দিকে তাকাতাম। তার চোখের দৃষ্টি অসম্ভব প্রখর। শ্রবণ শক্তিও খুবই সংবেদনশীল। ধারালো নখ, ধারালো বাঁকা ঠোঁট। সে বড়ো বড়ো দিঘি থেকে ছোঁ মেরে পায়ের ধারালো নখে গেঁথে বড়ো বড়ো রুই-কাতলা তুলে নিয়ে উড়ে উড়ে বাসায় এসে বসতো। লোভী মানুষেরা তা দেখে নিচে হই হল্লা তীব্র চিৎকার করতো। ঢিল ছুঁড়ে মারতো। যদিও ১০০ ফুটেরও উঁচুতে তার বাসা। যদি তার শিকারের মাছ মাটিতে পড়ে যায় মানুষ তা নিয়ে চলে যাবে। আহা বেচারা ঈগল। সেইবা খাবে কী,তার বাচ্চাদেরওবা মুখে কী খাবার যোগাবে? ঈগল ছানারা মাথা তুলে চিঁ চিঁ করতে লাগল, খাবার চায়ছিল। এ এক সংগ্রাম মুখর জীবন ঈগলের। কতো দূরে দূরে ছুটতে হতো ঈগলকে। বাচ্চাদের কষ্ট দেখে ক্লান্ত শরীরে খাবার জোগাড় করবার জন্যে তীব্র চিৎকার করে সে উড়ে যেতো। এমনওতো হতে পারে মাছ শিকার করে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে আসতো। আবার ভয় নিচে না মানুষ আছে। ডানা মুড়ে বসল বাসার কিনারে। ঈগল ছানারা মাথা তু্েল হাঁ করলে, ঈগল মাছ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়াতে লাগল। ঈগল হয়তো ভাবে, মানুষেরা এমন কেন? কেন তারাও সংগ্রাম করে খাবার যোগাড় করতে চায়না? ঈগল হয়তো ভাবে মানুষের অত্যাচার থেকে তার বাচ্চাদের বাঁচাতে পারবে তো? প্রকৃতির কাছে সকলের বাঁচার অধিকার তো সমান। ঈগল ভাবে, মানুষ কি এ কথা ভুলে যায়? মানুষ কেন তার বাসার দিকে ঢিল ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারে !
২. এই মন্দির পুকুর পাড়ের পশ্চিমে হেম ভট্টাচার্য মহাশয়ের বাড়ির পূর্বেইবা কেন আমার বাসা বাঁধার শখ? বৃক্ষটি তো অনেক প্রাচীন। এবং জায়গাটা এতকাল কিছুটা নিরিবিলিই ছিলো কিন্তু এখন তো এখানে অজস্র মানুষ আনাগোনা করে। আমার বাসার দিকে তারা ঢিল ছুঁড়ে মারে। এই ঢিল ছুঁড়ে মারা মানুষগুলো যদি আবার আমার মতো ঈগল হয়ে জন্মায়? তখন হয়তো বুঝবে আমার কষ্ট! যদি এমন হয়, আমিই বা যদি মানুষ হয়ে জন্ম লাভ করি আমিও কি আজকের মানুষের মতো ঈগলের গায়ে ঢিল ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারবো?