সরকার যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে যতটা দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে আইনগত প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য একটা প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপার আছে। আমরা বারবার বলছি, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে চাই। আশা করছি, উনাকে দ্রুত দেশে ফেরত এনে বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব হবে। খবর বাসসের।
এদিকে সাবেক ১১৯ জন বঞ্চিত কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে সচিব হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে ইতিমধ্যে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে তাকে ফেরত চেয়েছে। এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার অপরাধগুলো কতটা ভয়াবহ ছিল। পুরো পৃথিবী এখন তার অপরাধগুলো দেখতে পাচ্ছে। গুম কমিশনের রিপোর্টের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে প্রায় ৩,৫০০ মানুষ গুম হয়েছে। আইন–বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। এছাড়া জুলাই বিপ্লবে প্রায় ১,৫০০ ছাত্র–জনতা প্রাণ হারিয়েছে।
জুলাই মাসে গুলিবিদ্ধ আরাফাত নামে ৬ বছর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্রের শাহাদাতের কথা স্মরণ করে শফিকুল আলম বলেন, একটা শিশুকে পুলিশ গুলি করেছে, তা কতটা ভয়াবহ! গত রোববার তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি শেখ হাসিনার শাসনামলে শাপলা চত্বরে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর পরের হত্যাকাণ্ডও আমরা দেখেছি। বিএনপি বারবার বলছে তাদের ৫০ থেকে ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ মামলা ছিল মিথ্যা। ৫০ লাখ মামলা যাদের নামের হয়েছে তাদের পরিবার অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
শেখ হাসিনার ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, সরকার তার দুর্নীতির বিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করছে। শেখ হাসিনা কী পরিমাণ চুরি করেছেন বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়। শেখ হাসিনা কীভাবে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশে একটা চোরতন্ত্র জারি রেখেছিল। তার ভয়াল চিত্র শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে দেখা গেছে। প্রতি বছর ১ হাজার ৬শ কোটি মার্কিন ডলার পাচার এবং ব্যাংকগুলো থেকে কীভাবে টাকা লুট হয়েছে তা সবার জানা।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নিজে বলেছিলেন, তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। সেই পিয়নের ব্যাংক তহবিলে ৬২৬ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সাবেক ১১৯ জন বঞ্চিত কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে সচিব হচ্ছেন : বিডিনিউজ জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে জনপ্রশাসনে বঞ্চিত সাবেক ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ সুযোগ সুবিধাসহ পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তাদের মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এ কর্মকর্তাদের জন্য বকেয়া বেতন ও ভাতা বাবদ সরকারের ৪২ কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া তাদের পেনশন বাবদ বছরে অতিরিক্ত ১৩ কোটি টাকা খরচ হবে। ‘বঞ্চিত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো’ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়টি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুপারিশমালা দিয়েছিল কমিটি। সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে একটি সিদ্ধান্ত এসেছে। তিনি বলেন, ৭৬৪ জনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৯ জনকে সচিব পদে, ৪১ জনকে গ্রেড–১, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপ সচিব পদে ৪ জন।
শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য প্রযোজ্য তারিখ থেকে উচ্চতর পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করা যেতে পারে। এ বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই না, কোনো বঞ্চিত কর্মচারী এমনটা না ভাবেন যে তাকে আরো বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবার প্রতি ফেয়ার আছি এবং থাকব। এই সরকার খুবই স্বচ্ছ। আমরা যেটা করছি সব জানানো হচ্ছে। কোন কিছু গোপন করা হচ্ছে না। এ জন্য বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, সেটা আমরা মানতে রাজি নই। অবশ্যই যারা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে মনে করছেন তাদের বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টরা দেখছেন।