হাসপাতাল সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হোক, এটাই দাবি

নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে হাসপাতাল হোক, তা আমিও চাই। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর সাথে সহমত পোষণ করে বলছি, সিআরবিতে হাসপাতাল চাই না। এ দাবি ন্যায্য দাবি, নগরবাসীর প্রাণের দাবি। এ দাবি আদায়ে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাব। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ বাসভবনে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বিরোধী কর্মসূচিতে শুধু আমি নই, চট্টগ্রামের অন্যান্য মন্ত্রী, এমপি, মেয়র ও শীর্ষ প্রায় সকল নেতা রয়েছেন। কোনো স্বার্থে নয়, খেলার মাঠ, ওপেন স্পেসবিহীন চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি রক্ষায় সবাই এগিয়ে এসেছেন। আমরা সবাই সিআরবিতে শ্বাস নেওয়া অব্যাহত রাখতে চাই। তবে আমরা হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধেও নই। হাসপাতাল সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হোক-এটাই আমাদের দাবি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, সিআরবি যুগ যুগ ধরে ফুসফুস হিসেবে চট্টগ্রাম শহরের মানুষকে ছায়া এবং স্বস্তি দিয়ে আসছে। এটির নৈসর্গিক পরিবেশ মানুষকে প্রতিনিয়ত কাছে টানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নৈসর্গিক পরিবেশের কারণে সিআরবি হয়েছে সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন, যা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। সুতরাং সিআরবির অবয়ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল করার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেটি অন্যত্র করার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলব। তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী)
বলব চট্টগ্রামের এক চতুর্থাংশ এলাকার মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। হাসপাতাল করার জন্য সিআরবি ছাড়াও হাজার একর জায়গা আছে। সেখানে হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাব।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ বলেন, সিআরবির রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। এটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এখানে রয়েছে চাকসুর প্রথম জিএস বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রব, শহীদ মনোয়ার, শহীদ নজির, শহীদ আলিমসহ অনেক শহীদের কবর। শহীদের সমাধির উপর কোনো স্থাপনা আমরা চাই না। আমরা চাই শহীদের সমাধি সংরক্ষণ। তিনি বলেন, কোনো স্থাপনার জন্য সিআরবিতে আঘাত মানেই হচ্ছে ৭০ লাখ মানুষের ফুসফুসের ওপর আঘাত। এ আঘাত চট্টগ্রামবাসী মানবে না।
নাগরিক সমাজের নেতারা এ সময় অভিযোগ করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঔপনিবেশিক কায়দায় সিআরবিতে গেট দিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে জিম্মি করতে চেয়েছিল। আমাদের যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
নেতারা বলেন, রেলমন্ত্রী বলেছেন চট্টগ্রামের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা না চাইলে হাসপাতাল হবে না। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই গুটিকয়েক ছাড়া চট্টগ্রামের প্রায় সকল মন্ত্রী, এমপি ও নেতা সিআরবি রক্ষার পক্ষে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের পক্ষে আছে। সচেতন চট্টগ্রামবাসী সিআরবি রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ।
এ সময় নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সিআরবির নথিপত্র তার কাছে হস্তান্তর করেন। উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের কো-চেয়ারম্যন ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, ডা. শাহ আলম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, নাগরিক সমাজের যুগ্ম সদস্য সচিব রাশেদ হাসান, বোধনের সভাপতি হালিম দোভাষ, প্রণব চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা নূর খান, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, সরোয়ার আমিন বাবু, জায়দীদ মাহমুদ, নুরুল আজম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবলীলায় মিথ্যা বলা ফখরুলের বড় গুণ
পরবর্তী নিবন্ধতিন দফা প্রজ্ঞাপনের পরেও প্লাস্টিক বস্তায় পণ্য পরিবহণ