হালদায় ২য় দফা ডিম ছেড়েছে মা মাছ

হাটহাজারী প্রতিনিধি | বুধবার , ২ জুন, ২০২১ at ৮:১৬ অপরাহ্ণ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র জোয়ার ভাটার নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মা মাছ আজ বুধবার (২ জুন) বিকালে পুনরায় ২য় দফা ডিম ছেড়েছে। ফলে হালদায় চলছে ডিম সংগ্রহের উৎসব। সকাল ৯টা থেকে নদীর বিভিন্ন স্থানে ডিমের নমুনা দেখা দেয়। প্রায় সারাদিন মা মাছ নদীতে ডিমের নমুনা দিতে থাকে।
সকাল গড়িয়ে বিকাল হওয়ার সাথে সাথে বেলা সাড়ে চারটা থেকে নদীতে মাছ ডিম দেওয়া শুরু করে।
গত ২৫ মে মধ্যরাতে মা মাছ নদীতে ডিমের নমুনা ছাড়ে। পরদিন বেলা বারোটার দিকে পুনরায় ডিমের নমুনা ছাড়ে মাছ।
একই দিন ২৬ মে দিবাগত রাতে মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। দুই দফা নমুনা ডিম ছাড়ার পর যে পরিমাণ পাওয়া গিয়েছিল এতে ডিম আহরণকারীরা হতাশ হয়ে পড়ে।
গত বছরের ২২ মে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। তখন সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কেজি। কিন্তু এই বছর ২৬ মে রাতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫শ’ কেজি যা গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ মাত্র।
সেবার সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর সময় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নদীতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে বেশ কিছু ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ডিম কম পাওয়ায় রেণু উৎপাদনও কম হয়েছিল। ফলে এবার প্রতি কেজি রেণু গড়পরতা হিসাবে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল।
গত রবিবার, বুধবার নদীতে পাওয়া ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু বিক্রি শেষ হয়েছে। রেণু বিক্রি শেষ হওয়ার তিন দিন পর মাছ পুনরায় নদীতে ২য় দফা ডিম ছাড়ে। এবার ছাড়া ডিমের পরিমাণ পূর্বে ছাড়া ডিম থেকে বেশি বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট) ডিম ছাড়া অব্যাহত ছিল বলেও জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
নদীর সত্তারঘাট সংলগ্ন এলাকা, অংকুরীঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, পাতাইজ্জ্যারঢেক, কাকতিয়ার চর, আজিমারঘাট, নাপিতারঘাট, কেরামতলীর টেক, আমতুয়া, মাছুয়াঘোনা, স্লুইসগেইট, ঝোড়ার মুখ, বাড়িয়াঘোনা, রামদাসমুন্সিরহাট প্রভৃতি স্থানে ডিম ছেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন ডিম আহরণকারীরা।
নদীতে ডিম ছাড়ার আধিক্য দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মো. কাদের জানান, তিনি আজ বুধবার একটি নৌকায় ৫ বালতি ডিম পেয়েছেন যা গত ২৬ মে আহরিত ডিম থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
মধ্যম মাদার্শার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া মোটামুটি ভালো ডিম পেয়েছে বলে জানান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ-এর কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন আজকের ছাড়া ডিম পূর্বের ছাড়া ডিম অপেক্ষা বেশি বলে জানিয়েছেন।
হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুন হুদা রনি জানান, নদীর সত্তারঘাট থেকে শুরু করে রামদাস মুন্সিরহাট পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে মাছ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন।
ডিম আহরণের পরিমাণ ও সন্তোষজনক বলে জানান তিনি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রহুল আমিন জানান, আজ সকাল নয়টা থেকে নদীতে মাছ ডিমের নমুনা ছাড়ে। বিকাল সাড়ে চারটা থেকে নদীতে মা মাছ পুরাদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে।
তিনি নদীতে অবস্থান করছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, “এবার ডিম ছাড়ার পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেশি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ কার্যক্রম চলে। রাতে জোয়ারের পর আরো বেশি পরিমাণ ডিম ছাড়বে বলে আমি আশা করছি। গত মঙ্গলবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সাথে বজ্রপাতও ছিল। নদীতে ঢলের অপেক্ষাকৃত তীব্রতা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কিংবা জোয়ারের তীব্রতা না থাকায় এবার লবণাক্ত পানি ঢোকার আশংকা নেই।”
তাই এবার নদী থেকে সংগৃহীত ডিম ফোটাতে তেমন সমস্যা হবে না বলে আশাবাদী তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচারদিন ধরে নিখোঁজ রাঙ্গুনিয়ার মাদ্রাসা ছাত্র
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার