প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মাছ চোর চক্র এখন সক্রিয় হয়েছে হাত জাল ও বড়শি নিয়ে। নদীর পাড়ের এসব মাছ চোরদের এমন তৎপরতায় স্থানীয় জনসাধারণসহ নদীর মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্থানীয়রা বলেছেন, নদীতে প্রশাসনের পরিচালিত অভিযানে জালপাতা কমে আসলেও চোর চক্র এখন কৌশল বদল করে নদীতে নেমেছে হাত–জাল ও বড়শি নিয়ে। মাছ চোরদের ফেলা জাল ও বড়শির বিরুদ্ধে এখন অভিযান পরিচালনা না করলে নদীর মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
গত কয়েকদিন নদী ও সংযুক্ত কয়েকটি খাল পাড়ে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদীতে জাল পাতার হার কমে গেলেও সংযুক্ত খালে রয়েছে ঘেরা জাল বসানোর তৎপরতা। পরিদর্শনকালে ডোমখালী, কাগতিয়া, মগদাই খালের বিভিন্নস্থানে থাকা ভাসমান নৌকা ও পাড়ে ঘেরা জালের স্তূপ দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, রাতে বসানো হয় এসব ঘেরা জাল। ভোর সকালে উঠিয়ে স্তূপ করে রাখে।
হালদা নদীর কোতোয়ালীঘোনা, পশ্চিম গহিরা, বিনাজুরী, মদুনাঘাট, মইশকরম, দেওয়াজিরঘাট, মোকামীপাড়া, কচুখাইন, উরকিরচর, বাড়ীঘোনা, নাপিতের ঘাট, কাগতিয়া, সর্তারঘাটসহ প্রায় প্রতিটি স্পটে দেখা যায়–নদীর পাড়ে অথবা নৌকা ভাসিয়ে বড়শি ও হাত জালে মাছ শিকারীদের তৎপরতা। হাটহাজারী ও রাউজানের বিভিন্নস্থান দিয়ে প্রবাহিত সংযুক্ত খালেও চলছে বড়শিতে মাছ শিকার।
গত বৃহস্পতিবার মাছ চোরদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, নদীর কিনারায় বসে কয়েকজন লোক বড়শি ফেলে মাছ শিকার করছেন। বড়শিতে ধরা পড়া কয়েকটি মাছও দেখা গেছে। জানা যায়, স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে হাটহাজারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সেখানে গিয়ে মাছ শিকারে ব্যবহৃত বড়শি জব্দ করেছেন। শিকারীরা পালিয়ে গেলেও নাম পরিচয় সংগ্রহ করে এই কর্মকর্তা জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মদুনাঘাট বাজারে ব্যবসা করেন হালদা রক্ষা কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রজনন মৌসুমে মা মাছ শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মা মাছ নদীর কিনারায় এসে গা ভাসায়। কিছু কিছু মাছ আবার দুর্বল হয়ে জোয়ারের পানিতে সংযুক্ত খালের ভিতর ও চরের হাঁটু পানিতে উঠে পড়ে। এই সুযোগটি লুফে নেয় লোভী মাছ শিকারীরা। তারা বড় বড় হাত জাল নিয়ে তৎপর থাকে দুর্বল হয়ে পড়া মা মাছ ধরে নিতে। শিকারীরা বড় মাছ অতি গোপনে চড়া দামে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। আবার কেউ কেউ সুকৌশলে শহরের অভিজাত মাছ বাজারে নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ডিম দেয়ার মাহিন্দ্রক্ষণে মাছ চোরদের এমন তৎপরতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, নদীতে জালপাতার বিরুদ্ধে সফল অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়া মাছ চোর চক্র এখন নদীতে নতুন কৌশলে মাছ শিকারে তৎপর হয়েছে। গত বুধবার নদীর নাপিতের ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বড়শি জব্দ করেছি। চোরদের এই অপতৎপরতা রোধে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।