অতি সমপ্রতি সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলো, ‘হালদায় উদ্বেগজনক হারে কমছে গাঙ্গেয় ডলফিন’ সংবাদটি সত্যিই উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কেননা পরিসংখ্যান বলছে বিগত ৬ বছরে ৪০ টি ডলফিনের প্রাণ গেছে। এ শুধু পরিবেশ সচেতনতার চিন্তা নয়। এর সাথে জড়িত আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এবং জীব বৈচিত্র্যের প্রতি আমরা কতটুকু সহনশীল এর মাত্রা নির্ণয়। প্রাথমিক ভাবে ‘হালদা’ নদী সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই নদীটি বাংলাদেশের পূর্বে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির বদনাতলী পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রামের সমতল ভূমি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ‘কর্ণফুলী’ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। হালদা নদীর গতিপথে এর মূল অববাহিকা ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান এবং চট্টগ্রামের বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট সহ অন্যান্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ১৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদীটি আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি সর্পিলাকার হওয়ায় হালদা নদীতে পণ্য পরিবহনের ঘাটসমূহ বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। কেননা এই নদীর গ্রোতধারা রামগড় অঞ্চল হতে বয়ে নিয়ে যায় কাঠ, বাঁশ, ছন্ এসব নানা বনজ সম্পদ। হালদা নদীর মোট দৈর্ঘ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নৌপথে প্রায় সারা বছর-ই গ্রোতধারা বিদ্যমান থাকে। ফলে সব সময় নৌ চলাচল অব্যাহত থাকে। এটি জোয়ার-ভাটার নদী। বর্ষা ঋতুতে এখানে রুই-কাতলা এবং মৃগেল জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। সেসময় জেলেরা নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেন। এগুলো বিবেচনা করলে হালদা নদীকে বিশেষ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি ।
‘হালদা’ নদী আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবহমান একটি শাখা নদী। শৈশব থেকেই এই নদীকে দেখে আসছি কোমলতায় এবং সহৃদয়তায়। এই নদী কখনো প্রমত্ত হয়নি। এই নদী কখনো মাতাল হয়নি কিংবা জীবন ও জগতের কারও ক্ষতির কারণ হয়নি। যে নদীটি আমাদের কেবল দিয়ে গেছে সেই নদীটির প্রতি আমাদের সকলের সহমর্মিতা থাকাএকান্ত প্রয়োজন। নদীতে বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকা, নদীটিকে স্বচ্ছ সলিলা করে তোলা, নদীর দু’ধারের সবুজ প্রকৃতিকে বিনষ্ট না করা সহ এই নদীর জীব বৈচিত্র্যকে ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা হালদা নদীকে প্রাণে বাঁচাতে পারি।
তবেই ‘হালদা’ নদীতে আর ডলফিনের মৃত্যু হবে না কিংবা বড় মাছেরা বর্ষা ঋতুতে নির্বিঘ্নে ডিম ছেড়ে আমাদের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে আরো সমৃদ্ধশালী করে তুলবে। আমার স্বচ্ছ দৃষ্টি ওই সুদিনের পানে তাকিয়ে আছে নিশ্চিত এক গন্তব্যের সন্ধানে।