হারিয়ে যাচ্ছে হাট’র জৌলুস

তালুকদার হালিম | শনিবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগর, গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে বর্ণনা করছি। আটজন ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ হতে গৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ বর্ণনা। হাট’র নির্ধারিত সময়, স্থান, ক্রেতা উপস্থিতি, অভাববোধ এবং কেনাকাটার মজাটাই ছিল আলাদা। শহরে গ্রামে ‘হাট’ নামের স্থানকে হাট হিসেবে পরিচিতি নিয়ে স্বস্থানে বসে আছে অলসভাবে। কিছু হাটে বাজার বসে প্রত্যেক দিন। কোনো কোনো হাটে একদিনও না। তাছাড়া বাজার এখন যত্রতত্রই বলা যায়। কারণ মানুষ যে হারে বেড়েছে, হাটের পরিবর্তে বাজারও বসছে প্রতি ওয়ার্ড, ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে প্রতিদিন।

ঘরের কর্তা ছাড়া গৃহিণীরা এখন দুয়ারে বসেই ভ্যান গাড়িতে ফেরীওয়ালাদের নিকট হতে প্রায়ই সকল প্রকারের জিনিসই দর কষাকষি করে কিনতে পারছে। তাতে করে কর্তা ব্যক্তির সময়টাও সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি হাটে প্রয়োজনীয় মালামালসমূহের প্রত্যেকটি এখন কয়েকটি হাটে ঘুরেও পাওয়াটা দুষ্কর। কেননা দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে আর্থিক অসংকুলানে তারা বিভিন্ন পেশার কাজ হাতে নিয়েছে। হাট বসতো সপ্তাহে মাত্র দুইদিন: সোমশুক্রবার, শনিমঙ্গলবার, রবিবৃহস্পতিবার অথবা সোমবুধবার। যে কোনো ধরনের ফল, লৌহ নির্মিত দ্রব্য, মাছ, মাংস, মাটির তৈরি পাত্র, চাল, পিতলের জিনিস, তৈল, কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, লাকড়ী, বাঁশ, বেত দ্বারা নির্মিত সরঞ্জাম, রকমারী মুখরোচক খাদ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ইত্যাদির ছোট্ট পরিসরে বর্ণনা দিলাম। হয়তো বা কিছুটা বেমিলও হতে পারে। তবে আজকের প্রজন্মের জন্য এটা জানার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে, আশা করছি।

() মৌসুমী ফল মূল: পাকা পেঁপে, পাকা তাল, দেশী আম, বাইল্যা আম, কালো জাম, গোলাপ জাম, তেতুল, বত্তা, ফল (লাল বর্ণের বড় শসা), বড়ই, আতা, মোস্তান, মুউছি, পাইন্যাগুলা ইত্যাদি।

() চাল: ইরি, বোরো (দেশী চাল), বিনি, কাঁকন, বাসমতি, মেহেরুন, কলাবাইশ ধানের চাল ইত্যাদি।

() মাটির দ্রব্য: হাঁড়ি, বরুনা (ঢাকনি), য়াত্তোয়া, ছাঁরি, খোলকি, কলস, সরাই, পোইন ইত্যাদি।

() লৌহ দ্বারা নির্মিত দ্রব্য: দা, ছুরি, বটি, কোদাল, ছাবাল, কুড়াল, খোড়ানি, কাস্তে, জানজুইর, হাতুড়ি, পেরাক, বালতি, খুপি বাতি, খন্তি, চেরাগ, নাঙলের ফলা, খন্তা ইত্যাদি।

() পিতল: থালা, বাটি, কলসি, চামচ, চেরাগ ইত্যাদি।

() তৈল: কেরোসিন, ঘানির সরিষার তেল, মাইট্যা তেল, বুইজ্জ্যার তেল, কধুর তেল, তিলের তেল ইত্যাদি।

() কাপড়: বাচ্চাদের হরেক রকমের পোশাক, লুঙ্গি, শাড়ী, গামছা, থামি, ওড়না, চাদর, কান টুপি, মাফলার, সুয়েটার ইত্যাদি। () প্লাস্টিক: বাচ্চাদের পুতুল ও নানান খেলনা। () জ্বালানী: বাঁশ, গাছের লাকড়ি, গোন্ডার লাঠি (গোবরের) ইত্যাদি। () বাঁশ/বেতের তৈরি দ্রব্য: টুকরি (বাঁইর), ঢুলা (য়াতা), কুলা, চালনি, ছাটা, পাটি, মাদুরা, রুহ, জুঁইর, ছাই, ছিক্কা, হাত পাখা, ঢুলুইন (দোলনা), ফোইছ্যা, বেতের মোড়া, ঝাড়ু, ঝাঁটা, ইত্যাদি।

লেখক : কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখেলাটা বেশ জমছে
পরবর্তী নিবন্ধখুব জানতে ইচ্ছে করে