হারিয়ে যাচ্ছে চারণভূমি

গবাদি পশু নিয়ে বেকায়দায় পালনকারীরা

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | রবিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ে ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে গরুমহিষভেড়ার চারণ ভূমি। একদিকে কমছে কৃষি জমি অন্যদিকে বিভিন্ন চর অঞ্চলে গড়ে উঠছে অর্থনৈতিক জোন। তাই ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে গোমহিষের চারণ ভূমি। এতে করে গবাদি পশু পালনকারীরা চরম বেকায়দায় রয়েছেন।

মীরসরাইয়ের চরাঞ্চল বিশেষ করে ইছাখালী, মঘাদিয়া, সাহেরখালী ও ওচমানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অনেকেরই অবলম্বন ছিল গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া তথা গবাদি পশুর ওপর। তবে গবাদি পশুর মধ্যে মহিষের পালন ছিল সবচেয়ে বেশি। গরু কিংবা ছাগলভেড়া স্বল্প জায়গায় পালন করা গেলেও মহিষ পালনে বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে। ইছাখালী ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি পরিবারে একাধিক মহিষ রয়েছে এখনো। এসব মহিষ থেকে পাওয়া দুধ ও দই বিক্রি করে অনেক পরিবারের ভরণপোষণও চলে। মঘাদিয়া, ইছাখালী ও ওচমানপুরের হাজার হাজার একর চর গরু মহিষ পালনের উপযুক্ত স্থান। চরকে কেন্দ্র করে এসব অঞ্চলের মানুষ গরুমহিষের ওপর নির্ভরশীলতা যেন হাজার বছরের ঐতিহ্যও। কিন্তু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রসারতা লাভ করায় গরু মহিষ চরার স্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক গরু মহিষ পালনকারী ২০২২ সালে চরশরৎ এলাকার অর্থনৈতিক জোন সড়কে একটি মানববন্ধন করে। এসময় তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি করে, তাদের পালিত হাজারখানেক মহিষসহ গরুছাগলের খাবারের সংস্থান নিশ্চিতে চারণভূমিগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এসময় তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান প্রান্তিক চাষিসহ ছোট বড় গরু মহিষ খামারি সবাইকে আশ্বস্থ করে বলেন, অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ কখনোই গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ বিঘ্নিত করবে না। বরং সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

এই বিষয়ে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, আমরা সকল গরু মহিষ পালনকারীদের পক্ষে আছি। সবসময় এলাকার এই প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষায় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে সোচ্চার থাকবো।

ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ এলাকার মহিষ পালনকারী মাঈন উদ্দিন জানান, এ এলাকার প্রতিটি পরিবারের কাছে কমপক্ষে দুটি করে মহিষ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে চরানোর জন্য সব মহিষ চরে নিয়ে যাই। বর্তমানে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে মুক্তভাবে মহিষ চরার বিস্তীর্ণ প্রান্তর। জলাশয় ও খাবার গ্রহণের বিভিন্ন স্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে দিন দিন।

এই বিষয়ে অর্থনৈতিক জোন তথা বেজা কনসালটেন্ট আব্দুল কাদের খান বলেন, এই বিষয়ে পূর্ব থেকেই এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আমরা কোনো প্রকার গবাদি পশুর চারণ ক্ষেত্র নিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছি না। বরং কয়েকটি সরোবরসহ আরো পর্যাপ্ত স্থান উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে সহযোগিতা করছি।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ইকোনমিক জোনের বাইরে বা ভেতরের অনেক অংশে এখনো মহিষ চরাতে কোনো নিষেধ নেই। বরং আমরাও এই প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষায় এলাকাবাসীর সাথে সহযোগিতায় ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমেরিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় চন্দনাইশের যুবক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধফিফা রেফারি ব্যাজ হারাচ্ছেন জয়া চাকমা