পুরাতন জিনিস পুরাতন কিছু ব্যাপারটাই আকর্ষণের। কথায় আছে পুরাতন চাল ভাতে বাড়ে (অল দ্যাট ইজ ওল্ড ইজ নট ব্যাড) তাই আমার মতে পুরাতন জিনিসপত্র ফেলতে নেই সেটা বন্ধু হোক বা অন্য কিছু কারণ পুরাতনে স্বার্থহীনতার গন্ধ নেই, পুরাতন মানে পরীক্ষিত। আজ জরুরি কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম পুরাতন সে দুর্লভ দুই টাকা দামের ডাকঘরের হলুদ খাম দেখেই নস্টালজিক হয়ে গেলাম…..
এক সময় প্রচুর চিঠি লিখতাম দূরের বন্ধু স্বজনদের পত্রপত্রিকায় ম্যাগাজিনে বিভিন্ন লেখা পাঠাতাম তাদের থেকেও অনেক প্রতিউত্তর আসতো। পত্রিকার বিভিন্ন কুইজেও অংশগ্রহণ করতাম। যদিও লেখালেখির পুরাতন অভ্যাসটা এখনও আছে, তবে ধরণ পাল্টেছে আগে লিখতাম দিস্তা কাগজে, আর এখন লিখি মুঠোফোনে ইন্টারনেটের বদৌলাতে। আগে পোস্ট অফিসে গিয়ে চিঠি দিয়ে আসতে হতো আর এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে এর মাধ্যমে দ্রুত চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
কোথায় হারিয়ে গেলো কালের বিবর্তনে হলুদ খাম হাতে পাওয়ার অপেক্ষার দিনগুলি? যে খাম হাতে পাওয়ার পর অদ্ভুত একটা শিহরণ হত শিরায় শিরায়…এরপর খামের মুখ খোলার শিহরণ…ভেতর থেকে ভাঁজ করা চিঠি বের করা… উপস…চিঠির ভাঁজ খোলার কি এক অদ্ভুত শিহরণ ছিলো…আহা…কখনো রঙ–বেরঙের খামে আর রঙ বেরঙের কাগজে কত না কথার ফুলঝুরিতে এক একটা চিঠি যেত বন্ধু মহলে আর পরিচিত জনদের কাছে–অপেক্ষা থাকতো কখন উত্তর আসবে! প্রজন্ম তো জানেই না হলুদ খাম কী, কী সম্পর্ক তার সাথে আমাদের। আসলে হলুদ খামে অবরুদ্ধ প্রতিটি অক্ষর ছিল এক একটি কবিতা। যার মৃদু স্পর্শে দুমড়ে মুচড়ে ওঠতো আড়ালে লুকানো নব বধূর হৃদয় উদ্যান, মায়ের চোখে বয়ে যেত জলতরঙ্গ আর, প্রবল আনন্দ আবেগে বাবা হত বাকরূদ্ধ। পিতার চিঠি পেয়ে আনন্দে বিহ্বল হতো সন্তান, ভাইয়ের চিঠি পেয়ে বোন খুঁজে পেত স্নেহের বাঁধন, ছেলের চিঠি পেয়ে থেমে যেত বিধবার ক্রন্দন। কালের গহ্বরে আজ বিলীন সেই আনন্দ, উল্লাস আর আবেগ, আধুনিকতার করাল গ্রাসে এই পৃথিবী আজ নিস্তব্ধ। আসলে আমাদের মতো মানুষের একটা বড় ব্যাপার হলো আমরা থাকতে মর্ম বুঝি না, খুঁজি না। কিন্তু যখন হারাইয়া যায়, চলে যায়, মরে যায়; তখন খুঁজি, চাই আর হাহাকার করি। মানুষটা ভালো ছিল, পাখিটা মরে গেলো, নদীটা ভরাট হয়ে গেলো, সেদিন টা খুব ভালো ছিলো রঙিন ছিলো মুহূর্তে ভরা সেই সব দিনগুলি এমনই সব হাহাকার আর বিষণ্নতা, বিষাদে ভরাই মন। তাই বিলাপ করি আনমনে খুঁজে বেড়াই এতো এতো ব্যস্ততার ফাঁকে সেইসব শৈশব কৈশোর‘ র দিনগুলি। হারিয়ে গেছে সময় আমার, সময়ের গতিতে, হারিয়ে গেছে আঁধার–জোনাক, বিজলি বাতিতে হারিয়ে খুঁজে পাই না তো আর সোনালি সে দিন, হারিয়ে যাওয়া শৈশব কৈশোরের সেই দিন জমে আছে সব ঋণ, যেসব দিনগুলোর প্রতিটি মুহূর্তের কিস্তি আজকের আমি আমরা সবাই।