হার না মানা এক রাব্বানির গল্প

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ রাব্বানি। জন্ম থেকেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। গত পাঁচ বছর আগে ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল তার একমাত্র পেশা। ভিক্ষার ৩০ হাজার টাকা জমিয়ে বানিয়ে নেন একটি রিকশা ভ্যান। এক হাতে রিকশা ভ্যানের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ফেরি করে বিক্রি করেন রকমারি লুঙ্গি আর গামছা। ভ্রাম্যমাণ এই ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন। রাব্বানির বাড়ি কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরের নীলগঞ্জে। বাবা-মা এবং চার ভাই-বোনের সংসার। থাকেন নগরীর চকবাজার বড় মিয়া মসজিদ এলাকায়। বাবা ভ্যান গাড়িতে শাক সবজি বিক্রি করেন। বড় ভাই ইলেকট্রিকের কাজ করেন। বাবা ও ভাইকে সহায়তা করতে তিনিও নেমে পড়েছেন জীবন যুদ্ধে। পরিবারের দুই বোন ও এক ভাই স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করে।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ রাব্বানি গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি ভিক্ষা করা ছেড়ে দিয়েছি। ভিক্ষা করার সময় অনেক মানুষ দয়া করে ১-২ টাকা দিতো। তবে বেশিরভাগ মানুষ আমাকে ফিরিয়ে দিতো। তখন খুব খারাপ লাগতো। আল্লাহ আমাকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, চাইলেও তো শারীরিক শ্রমের কোনো কাজ করতে পারি না। তাই ভিক্ষার শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিল, টাকা জমিয়ে নিজে কিছু করব। স্বাধীনভাবে চলব। ভিক্ষা ছাড়ার পর পর ব্র্যাক স্কুলে ভর্তি হয়ে যাই। তারপর থেকে সকালে স্কুলে যেতাম, আর দুপুর হলে খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়তাম রিকশা ভ্যান নিয়ে। বাসায় ফিরতাম রাত ১০টায়। এখন করোনার জন্য স্কুল বন্ধ। গত দুদিন আগে স্কুলের ম্যাডাম ফোন করে আমাকে বলেছেন- আমি যেন টিভিতে ক্লাসগুলো দেখি। আজকেও (গতকাল) আমি সেই ক্লাস দেখে তারপর বের হয়েছি।
বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে রাব্বানি বলেন, এখন বিক্রি একটু কম। আগে সারাদিনে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার লুঙ্গি-গামছা বিক্রি করতাম। লাভও ভালো হতো। এসব লুঙ্গি আমি পাইকারি দরে রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে কিনে আনি। দোকানদার আমাকে বাকিতেও মাল দেন। এখন আমি প্রতিটি গামছা ১০০ টাকা এবং লুঙ্গি বিক্রি করছি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়। অনেক মানুষ কার থামিয়েও আমার থেকে লুঙ্গি কিনেন। এটি আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমি স্বনির্ভর হতে চেয়েছিলাম, যাতে কোনো লোক আমাকে দেখে করুণা না করে। ব্যবসার পাশাপাশি আমি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যেতে চাই। আমার স্কুলের ম্যাডামরা আমাকে অনেক উৎসাহ দেন। ওনারা আমাকে আমার মতো প্রতিবন্ধী লোকদের সফলতার গল্প শোনান। এসব গল্প শুনতে আমার ভালো লাগে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যাচ মিসের মহড়ায় হতাশার প্রথম দিন বাংলাদেশের
পরবর্তী নিবন্ধবহদ্দারহাটে পুড়েছে অর্ধশত বসত ঘর