হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন(১৮০৫–১৮৭৫)। কবি, অনুবাদক ও শিশুসাহিত্যিক। রূপকথার গল্পের জন্য তাকে রূপকথার জাদুকর বলা হয়। বিশ্ব শিশুসাহিত্যাঙ্গনে তিনি একজন চির স্মরণীয় লেখক। হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল ডেনমার্কের অডেন্সে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হ্যান্স এন্ডারসন, মা এনি মারি এন্ডারসন। এ্যান্ডারসন ছিলেন বাবা–মার একমাত্র সন্তান। অতি অল্প বয়সেই বাবাকে হারান। পড়াশোনা বাদ দিয়ে বেরিয়ে পড়েন চাকরির খোঁজে। শিক্ষানবিস হিসেবে প্রথমে কাজ করলেন এক কাপড়ের কারিগরের কাছে, এরপর স্বপ্ন দেখেন নাবিক হবার। এর মধ্যেই কিন্তু এ্যান্ডারসনের একটা কবিতা বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে। ইংরেজিতে কবিতাটির নাম– দ্য ডাইং চাইল্ড। কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রূপকথার গল্প লেখায় মনোনিবেশ করেন। ছোটদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন কল্পনার এক আশ্চর্য জগৎ। শিশুদের জগত বড়দের চেয়ে আলাদাই শুধু নয়, অনেক অনেক রঙিন আর প্রাণবন্তও। বিশ্বের ও বাংলা ভাষার অনেক শিশুসাহিত্যিক এই রংদার জগতটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন আকর্ষণীয় করে। তাঁর রূপকথাগুলো একেবারেই মৌলিক। বিশ্বসাহিত্যর বিস্তীর্ণ অঙ্গণ জুড়ে সাজানো রয়েছে মনোমুগ্ধকর রূপকথার পসরা। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে অভিনীত হয় হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের প্রথম নাটক। বেশ জনপ্রিয়ও হয় নাটকটি। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই। আর তার প্রথম ভ্রমণ ডায়েরিও প্রকাশিত হয় ওই বছরই। জার্মানি ঘুরে এসে তিনি তার সেই ভ্রমণকাহিনি প্রকাশ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার ভ্রমণবিষয়ক বইগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ভ্রমণের জন্য রাজার আর্থিক সহায়তাও পান। জার্মান ভাষায় প্রথম তার লেখার অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে। আর ফরাসী ভাষায় ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম যে লেখাটি অনুবাদ হয়, সেটি ছিল রূপকথা। তাঁর লেখা ১৫০টির বেশি রূপকথা তাঁকে দিয়েছে অমরত্ব। এসব রূপকথার মধ্যে ‘দি টিন সোলজার’, ‘দি এমপেরর্স নিউ ক্লোদস’, ‘লিটল মারমেইড’,‘দি টিনডারবক্স’, ‘দি স্নো কুইন’, ‘দি আগলি ডাকলিং’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা এসব রূপকথা বিশ্বের ১২৫টিরও বেশি ভাষায়া অনূদিত হয়েছে। তাঁর রূপকথাগুলোর কাহিনি অবলম্বনে অসংখ্য চলচ্চিত্র, নাটক, ব্যালে নৃত্য, অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।