দেশের ৩০টি জেলার ৯৮টি উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে বাজারঘাট, বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় হাত-মুখ ধোয়ার (রানিং ওয়াটার) ব্যবস্থা করা হবে। আর এসব কাজ বাস্তবায়নে পরামর্শক সেবায় খরচ করা হবে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পের আওতায় এ খরচ করা হবে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এর অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, প্রকল্পটির আওতায় দরিদ্রদের আচরণ পরিবর্তন করার জন্য খরচ করা হবে ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। প্রকল্পটিতে মোট খরচ হবে এক হাজার ৮৮২ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫০ কোটি ৮২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং চীনের নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ হিসেবে দেবে এক হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত ছিল, এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের সব বিভাগের ৯৮টি উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও করোনা রোধে রানিং ওয়াটারসহ হাইজিন সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়বে। প্রকল্পটির প্রধান কাজগুলো হলো- ৭৮টি লার্জ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, তিন হাজার ৩৬৪টি কমিউনিটি পর্যায়ে পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩৫২টি পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, ৭৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেটে রানিং ওয়াটার সুবিধাদি প্রদান, অতি দরিদ্রদের জন্য তিন লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি টয়লেট, করোনা রোধে পানি সুবিধাদিসহ ৮৮২টি হাত ধোয়া স্টেশন নির্মাণ, করোনা রোধে প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সরবরাহ, ১৬২৪ জনমাস পরামর্শক সেবা (পিএমইউ), ৩৪০ জনমাস কারিগরি পরামর্শক, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম কাজ করা হবে।
একনেক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, এ প্রকল্পে যে কার্যক্রমগুলো হবে সেগুলো খুবই আদিকাল থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা করে আসছে। তারপর থেকে এ ধরনের প্রকল্পে পরামর্শকখাতে এত টাকা খরচ অনুমোদন কেন দেয়া হলো? জবাবে প্রকল্প যাচাই-বাছাইকারী পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্টদের প্রতি মাসের বেতন ধরা হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। বর্তমান বাজারে ভালো কনসালট্যান্ট পেতে গেলে। প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট আড়াই লাখ টাকা ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকার নিচে প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট খুব কঠিন। কারণ প্রকিউরমেন্টে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অথবা এক বা দুই বছরের মাস্টার কোর্স করা আছেুএ ধরনের লোক নিতে গেলে আমি দেখেছি অন্যান্য প্রকল্পেও তিন লাখ টাকার নিচে স্পেশালিস্ট পাওয়া কঠিন। তাছাড়া ওয়াটার সাপ্লাই স্পেশালিস্ট, হাইড্রোলজিস্ট তারা প্রত্যেকেই এনভায়রনমেন্টাল সেফগার্ড স্পেশালিস্ট। তাদের কম টাকায় পাওয়া যায় না।’