হেফাজত ইসলামের ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে হেফাজতের মূল কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত হাটহাজারীতে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। পটিয়ায় বাস স্টেশন থেকে থানার মোড় ও শান্তির হাট এলাকায় মহাসড়কে দেশীয় অস্ত্র ও ইট পাটকেল নিয়ে অবস্থান নেয় হেফাজত কর্মীরা। গাছের গুঁড়ি ফেলে রেলপথ অবরোধ করেছে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ফটিকছড়িতে কড়াকড়ি লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ ও বিজিবি টহলও জোরদার ছিল। কঙবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে হরতাল কর্মসূচি।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। হরতাল চলাকালে পৌরসভা সদরে দোকানপাট বন্ধ ছিল। হাটহাজারী – নাজিরহাট মহাসড়ক সড়কের সরকারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কের মাটিয়া মসজিদ, মীরেরহাট, মুন্সির মসজিদের টেক, চারিয়া বোর্ড স্কুল, চারিয়া মাদরাসা, বুড়ি পুকুর পাড়, মুছার দোকান, মুহুরীহাট বটতল প্রভৃতি এলাকায় মহাসড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি দিয়ে হেফাজত কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাতে গাড়ি চলাচল করতে না পারে। ফলে সকাল থেকে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সরকারহাট বাজারের উত্তর দিকে নাজিরহাট নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। কিছু সংখ্যক সিএনজি টেঙি চলাচল করেছে। যেসব চালক ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন তারা বেশ কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছেন বলে যাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হরতালের প্রতিবাদে বেলা ১১ টার দিকে সরকারহাট বাজারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়েছে। হাটহাজারী পৌরসভা ছাড়া উপজেলার অন্যান্য স্থানে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল।
এদিকে বিকাল তিনটার দিকে হাটহাজারী – নাজিরহাট মহাসড়কের মাদরাসা সংলগ্ন স্থানে হেফাজতের আমীর আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী সংবাদ সম্মেলনে আসেন। হুইল চেয়ারে বসে তিনি তার বক্তব্যে হেফাজতের ডাকা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি হেফাজতের দাবিসমূহ অবিলম্বে মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সারাদেশে পুলিশের গুলিতে ১৬ জন শহীদ হয়েছেন দাবি করে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এছাড়া তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলামের অপসারণের দাবি করেন। ভবিষ্যতে ইসলামের ঈমান, আক্বিদা রক্ষার যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে হেফাজতকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে আমীরের সাথে হেফাজতের নেতাকর্মীর উপস্থিত ছিলেন।
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, দূরপাল্লার যানবাহন ছাড়াও পটিয়া মহাসড়কে ছোট ছোট পরিবহনও চলাচল করতে দেয়নি হেফাজত কর্মীরা। কয়েকটি খাবার ওষুধের দোকান ছাড়া অন্যকোন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলতে দেয়নি। এসময় হেফাজত কর্মীদের হাতে লোহার রড, কাঠের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র ও পাথর থাকায় পথচারী ও অন্যান্যরা ভয়ে তটস্থ ছিল। দিনভর চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনে কোন রেল চলাচল করেনি। এর ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষকে। রেলপথ ও মহাসড়ক থেকে এসব হেফাজত কর্মীদের সরাতে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। হরতাল চলাকালে থানার অভ্যন্তরে পুলিশ, বিজিবি এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক অবস্থান করেন। তবে হরতাল চলাকালে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালী উপজেলায় হেফাজত ইসলামের ডাকা সকাল কর্মসূচি সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এ সময় উপজেলার গোরকঘাটা-জনতা বাজার প্রধান সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে হেফাজত কর্মীদের যান চলাচল বন্ধ করে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। তবে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি।
স্থানীয় সূত্রে যায়, উপজেলার বড় মহেশখালীর নতুন বাজার, কালারমারছড়া, ঝাপুয়া, মাতারবাড়ী, গোরকঘাটা চৌ-রাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার উপর লাঠিসোটা হাতে অবস্থান নেয় হেফাজত ইসলামের কর্মীরা।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল হাই বলেন, কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকল ধরনের নাশকতা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, গতকাল হেফাজত ইসলামের ডাকা হরতালে ফটিকছড়িজুড়ে বেশ কড়াকড়ি লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ ও বিজিবি টহলও জোরদার ছিল। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। ভোর থেকে ফটিকছড়ির নাজিরহাট ঝংকার মোড়, ফটিকছড়ি পৌর সদর, কাজিরহাট, হেয়াকো, আজাদী বাজার, নানুপুর বাজার, মো. তকিরহাট এলাকায় হরতাল সমর্থকরা দলে দলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জড়ো হয়ে সড়কে ব্যারিকেড দেয়। ছোট ছোট বিক্ষোভ মিছিল করে। সড়কের উপর বসে পেপার পড়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হরতালের কারণে সাধারণ মানুষ বেশ দুর্ভোগে পড়ে।
এদিকে দুপুর একটায় হেফাজত ইসলামের উপদেষ্টা বাবু নগর মাদরাসার মোহতামীম মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ফটিকছড়ি সদরে এসে অবরোধকারীদের সমর্থন জানান এবং নিহতদের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত করেন। ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম বলেন, হরতালকারীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছে। পুলিশ সব স্থানে কড়া নজর রেখেছে।