নগরীর হাজারী গলির পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত হয়ে এসেছে। গতকাল সব দোকানপাট খুলেছে, স্বাভাবিকভাবে বিকিকিনিও চলেছে। অপরদিকে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪৯ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৫ জনের জন্য গতকাল জামিনের আবেদন করা হলে আদালত নামঞ্জুর করেন। এদিকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে দোকান খুলে দেয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ প্রদানের পাশাপাশি দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। যেসব নিরীহ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা হাজারী গলিতে গতকাল শান্তি ফিরেছে। লুটের শংকায় সিলগালা করে দেয়া সবগুলো দোকান গতকাল প্রশাসন খুলে দিয়েছে। এতে করে পাইকারি ওষুধ বাজার ও স্বর্ণ পট্টি হিসেবে খ্যাত হাজারী গলিতে স্বাভাবিক ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালিত হতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক ব্যবসায়ীর ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায় হাজারী গলিতে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি যীশু বনিক এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, হাজারী গলিতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুস্কৃতকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ভাঙচুরের প্রস্তুতিকালে যৌথবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের উপর থেকে এসিড ও পাথর ছুঁড়ে মারা হয়।
এতে করে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধ ও স্বর্ণের দোকান লুটপাট হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিটি দোকান জেলা প্রশাসকের সহায়তায় সিলগালা করে দেয়া হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা যৌথবাহিনীর ওপর এসিড নিক্ষেপ ও পাথর ছুঁড়ে মারার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় যৌথ বাহিনীর সাথে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে দোকানসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় হাজারী গলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্যও তারা আহ্বান জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটে গিয়েছিল। যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা আবারও আগের পরিবেশ ফিরে পেয়েছি। এখানে প্রায় ৩০০–৪০০ দোকান আছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় কোন সন্ত্রাসীরা যৌথ বাহিনীর ওপর অ্যাসিড হামলা করেছে তা চিহ্নিত করতে আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাদের দিয়ে সহযোগিতা করছি। তারা বলেন, সোনার দাম বাড়ার কারণে এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আশা করছি হাজারী গলির পরিস্থিতি এখন থেকে শান্ত থাকবে। আমরাও শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে পারব।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৮২ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪৯ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি ৩৩ জনকে যাচাই–বাছাই করে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এজাহারভুক্ত ৪৯জনকে কারাগারে পাঠানো হয় বুধবার রাতে। গতকাল এদের মধ্যে ৪৫ জনের জামিনের আবেদন করা হলে আদালত নামঞ্জুর করেছেন।