সরকারের পতনের দাবিতে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হামলা চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা করার অভিযোগে গতকাল পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। নগরীর কোতোয়ালী থানায় গতকাল মামলা দুইটি রেকর্ড করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলন দমাতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ওই দুই শিক্ষার্থী নিহত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র কাউছার মাহমুদ, অপরজন বাকলিয়ার শান্তিনগর এলাকাস্থ একটি মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র নিজাম উদ্দিন।
নিহত কাউছার মাহমুদ (২২) নগরীর ডবলমুরিং থানার মোগলটুলি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেবের পুত্র। কাউছার চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে নিজাম উদ্দিন (২১) নগরীর কোতোয়ালী থানার খলিফাপট্টি এলাকার মোহাম্মদ সুরুজ মিয়ার পুত্র। নিজাম নগরীর বাকলিয়ার শান্তিনগর এলাকায় একটি মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
কাউছার মাহমুদ হত্যা মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৯১ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। নিজাম উদ্দিন হত্যা মামলায় হাছান মাহমুদ–নওফেলসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। দুইটি মামলারই বাদী নিহতদের পিতা।
মামলা রেকর্ডের কথা স্বীকার করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল করিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে দুই ছাত্র নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটিতে ৯১ জন এবং আরেকটিতে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
উভয় মামলার আসামির তালিকায় থাকা একাধিক সাবেক মন্ত্রী–সংসদ সদস্যসহ অধিকাংশই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতাকর্মী।
কাউছারের বাবা আবদুল মোতালেবের দায়ের করা মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি, মহিউদ্দীন বাচ্চু ও আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, জহরলাল হাজারী, এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, জোবায়ের, বাহাদুর, আব্দুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, জিয়াউল হক সুমন, গিয়াস উদ্দিন, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, আশরাফুল আলম, শহীদুল আলম ও আব্দুস সবুর লিটন, সরকারি সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুদীপা দত্ত, সাবেক সাংসদ ফজলে করিমের ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, নগর আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মানস রক্ষিত, চন্দন ধর, মশিউর রহমান, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম, সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, নগর যুবলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক সুমন ও সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার প্রমুখকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে কাউছার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। ১৩ অক্টোবর ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
অপরদিকে মাদ্রাসা ছাত্র নিজামের বাবা মোহাম্মদ সুরুজ মিয়ার দায়ের করা মামলায়ও হাছান মাহমুদ, নওফেল, ফজলে করিম ও তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী, আ জ ম নাছির, জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, নুরুল আজিম রনি, জাকারিয়া দস্তগীরসহ ৩৫ আসামির নাম রয়েছে। এই মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট দুপুরে নগরীর লালদীঘির পাড়ে ছাত্র–জনতার সমাবেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।