দুই যুগ আগে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যার ঘটনায় জীবিত ১১ আসামির মধ্যে দশজনেরই সাজা কমেছে। মৃত্যুদণ্ডের এক আসামিকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। যাবজ্জীবনের এক আসামির সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া নয়জনের সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে দশ বছর করে কারাদণ্ড। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
জজ আদালতে আটজনকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন খারিজ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়। ঢাকার দায়রা জজ রুহুল আমিন ২০১৪ সালের ২৩ জুন এ হত্যা মামলার রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি মুফতি হান্নান ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ মামলাতেও তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল জজ আদালত। খবর বিডিনিউজের।
এছাড়া জজ আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আব্দুর রউফ ও ইয়াহিয়া হাই কোর্টে আপিল শুনানি অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় মারা যান। সে কারণে এই তিনজনের নাম মামলা থেকে বাদ যায়। জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জীবিত আসামিদের সবার সাজা হাই কোর্টে কমেছে। তাদের মধ্যে মো. তাজউদ্দিকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমানের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমে হয়েছে দশ বছরের কারাদণ্ড। জজ আদালতে যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হওয়া ছয় আসামির মধ্যে কেবল শাহাদাতউল্লাহ জুয়েলের দণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। এছাড়া হান্নান সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহেরকে সাজা কমিয়ে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) রমনা বটমূলে ওই হামলা চালিয়েছিল বলে মামলার বিচারে প্রমাণিত হয়েছে। সেটা ছিল ‘ব্রুটাল মার্ডার’, এ দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত। ২০০১ সালে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা; তাতে ১০ জনের প্রাণ যায়। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলে আঘাত হানতে মৌলবাদী গোষ্ঠী সেই হামলা চালিয়েছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
হামলার পর ওইদিনই নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। ঘটনার প্রায় আট বছর পর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ঢাকার দায়রা জজ রুহুল আমিন ২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলার রায় দেন। সেখানে ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে থাকা আসামিরা পরে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালত আপিল করেন। অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য নিয়ম অনুযায়ী মামলাটি হাই কোর্টে আসে। বেশ কয়েকটি বেঞ্চ ঘুরে চলতি বছর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।