(পিসিওএস) হলো নারীদের একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা মূলত প্রজননক্ষম বয়সে বেশি দেখা যায়। এটি ডিম্বাশয়ে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ডিম্বাণুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা বাধাগ্রস্ত করে। যেমন ধরুন, আমাদের জরায়ুতে প্রতি মাসেই ডিম্বানু তৈরি হয় কিন্তু পিসিওএস হলে এই ডিম্বানুগুলো মুক্ত হতে পারে না এবং গর্ভাশয়ে ছোট ছোট দলা পাকিয়ে জমতে থাকে। এসবের কারণে কখনো পেটে ব্যাথা, হরমোনের সমস্যা, অনিয়মিত মাসিক চক্র ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পিসিওএস–এর সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য–
অনিয়মিত মাসিক চক্র–মাসিক দেরিতে হওয়া, একেবারেই না হওয়া বা অল্প রক্তপাত হওয়া।
ডিম্বাশয়ে সিস্ট–ছোট ছোট ফোঁড়া বা সিস্ট তৈরি হয় (তবে সবসময় সিস্ট থাকতেই হবে, এমন নয়)।
হরমোন ভারসাম্যহীনতা–পুরুষ হরমোন বেশি থাকায় মুখে ব্রণ, চুলকাটা, শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানো ইত্যাদি দেখা যায়।
কিভাবে বুঝবেন পি সি ও এস–এ আক্রান্ত?
ওজন বেড়ে যাওয়া (বিশেষত পেটের চারপাশে)
ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা
মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
গর্ভধারণে সমস্যা
মানসিক সমস্যা যেমন স্ট্রেস, উদ্বেগ, বা হতাশা
যেসব কারণে হতে পারে পি সি ও এস–
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে রক্তে চিনি বাড়ে, যা ডিম্বাশয়ে প্রভাব ফেলে)
জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস
সহজ কিছু কাজেই মুক্তি পেতে পারেন পিসিওএস থেকে। পিসিওএস পুরোপুরি সারানো না গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন:
লাইফস্টাইল পরিবর্তন–নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ডায়েট, ওজন নিয়ন্ত্রণ।
ঔষধ–মাসিক নিয়মিত করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমানোর জন্য মেটফর্ম ইত্যাদি ডাক্তারি পরামর্শে ব্যবহার করা যায়।
ত্বক ও চুলের যত্ন– ব্রণ বা লোম সমস্যার আলাদা চিকিৎসা।
গর্ভধারণে সহায়তা–প্রয়োজন হলে হরমোন চিকিৎসা বা ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট নেওয়া যায়।
পিসিওএস হলো দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, যেটা সচেতন জীবনধারা আর সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই রোগের সাথে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি জড়িত এবং আমাদের এশিয়াভিত্তিক দেশে পিসিওএস নিয়ে এখনো সচেতনতা তৈরি হয়নি তাই সচেতন কাজগুলোর উদ্যোগ নিতে পারেন ঘর থেকেই।