রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘হতাশা একটি বিলাসিতা। হতাশার জায়গাটি আজ থেকে দখল করুক কাজ শেষের তৃপ্তি মাখা ক্লান্তি’। সত্যি বলতে আমরা নিজেরাই হতাশার সৃষ্টি করি। আমরা একবারের জন্যও ভাবি না জীবন হলো উপভোগ করার জন্য, হতাশাগ্রস্ত হয়ে নষ্ট করার জন্য নয়। হতাশা আসলে কিছুই করে না, শুধু আত্মার পবিত্রতা নষ্ট করে। লেপার্ড সেঞ্জো বলেছেন, ‘যার উপর বেশি আশা করবে একদিন তার কারণেই হতাশায় ভুগবে’। তাই বলে জীবন কখনো আশাহীন হতে পারে না। আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। উইলিয়ামস এর মতে,‘পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত এমন কোনও হতাশা আসেনি যা আশাকে পরাজিত করতে পারে’। অনেক তত্ত্ব ও বাণী গোচরীভূত হবার পরও হতাশাকে আমরা অবচেতন মন থেকে এগিয়ে রাখি। মানসিক দৌর্বল্য আমাদের হতাশামুখী করে তোলে। ফলে মৃত্যুর অনেকটা কাছে আমরা পৌঁছুতে থাকি। লি লেলোকা বলেছেন, ‘হতাশা হলো বিষের মত যা মানুষের মধ্যে ঢুকলে রক্ষা পাওয়া অসম্ভব প্রায়’। হতাশ হতে কখনোই বেশি সময় লাগে না, তবে কাটিয়ে উঠতে বছরের পর বছর কেটে যায়। তাই হতাশাকে প্রশ্রয় নয়। একবার ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করি আমরা হতাশা কেন করি? বিষয়গুলো আসলে অত জোরালো কিছুই নয়। ঘাত প্রতিঘাত এই জীবন সুখ দুখ, আনন্দ বেদনা নিয়েই রচিত। আমরা শুধু দুঃখগুলোকে আঁকড়ে ধরে হা হুতাশ করি। সন্তানের ফলাফল তেমন ভালো হয়নি তাই বাবা মায়ের হতাশা–ভবিষ্যৎ কী হবে? অন্যদিকে বাবা–মা সন্তানের জন্য তেমন কিছু করে যেতে পারেননি তাই সন্তানের হতাশা– বাবা মা আমাদের কী দিলেন? আমরা কী পেলাম? চাকরির ক্ষেত্রে সবার প্রমোশন হচ্ছে শুধু আমারই হচ্ছে না বলেই হতাশা কিংবা স্বামী শ্রী স্বরূপানন্দের বাণীতে ‘যোগ্য যাদের ঠাঁই ফাঁসির কাঠে /বসিল তাহারা গিয়া রাজার পাটে ’এমন শ্রেণিবৈষম্য দেখে হতাশা–আমি কি যোগ্য নই? আসলে মানুষের হতাশার শেষ নেই।
সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি যখন ভালোবাসার অভিনয় করে স্বার্থ হাসিল শেষে, হাস্যকর অজুহাতে সরে যেতে চায় কিংবা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নির্লজ্জভাবে আরেক জনের সাথে হাসি–ঠাট্টায় মেতে উঠে তখন হতাশা এসে গ্রাস করে, যা মৃত্যুর শামিল। অন্যের সফলতায়, সুখে ঈর্ষাকাতর হয়েও আমরা হতাশ হই। আবার নিজস্ব চাওয়া–পাওয়ার হিসেব না মিললেও হতাশা গ্রাস করে। টম রবিন্স বলেছেন, ‘যদি তুমি খারাপ এবং হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতেও হাসতে পারো, তবে তুমি জিতে গেছো’।
প্রকৃতি আমাদের মানুষ চিনিয়ে দেয়। তার চরিত্র বুঝিয়ে দেয়। আমরা অল্পতে ভেঙে পড়বো না। মনোবল হারাবো না। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শিখলে জয় অনিবার্য। আত্মতুষ্টিতেই শান্তি, সুখ ও সফলতা বিরাজমান। প্রয়োজনে একাই চলতে হবে। জ্যাক্সন ব্রাউনস বলেছেন, ‘জীবনে একা চলতে শিখতে হয়, কারণ অনেক সময় আশেপাশের মানুষগুলো হতাশার মাধ্যমে পরিচয় কেড়ে নেয়’। সত্যেও মুখোমুখি হতে, বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করতে, মুখোশের অন্তরাল ভেদ করতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে। আশার হাত ধরতে হবে, কিন্তু হতাশা নয়। পরিশেষে জর্জ উইনবারের কথা দিয়ে শেষ করি, ‘আশা কখনো তোমাকে ছাড়ে না বরং তুমিই তাকে ছেড়ে দাও এবং হতাশ হয়ে পরো’।