চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনের দুই সেশন ছিল বাংলাদেশের দখলে। বলা যায় এই দুই সেশনে ভারতীয়দের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম দিনের তৃতীয় সেশন থেকে শুরু করে দ্বিতীয় দিনের পুরোটাই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ থাকে স্বাগতিকদের হাতে।
প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে অশ্বিন–জাদেজার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের পর দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশি ব্যাটারদের হতশ্রী ব্যাটিং টেস্টের নিয়ন্ত্রণই শুধু নিয়ে নেয়নি ভারত, বাংলাদেশ চাপা পড়তে যাচ্ছে রান পাহাড়ের নিচে। ম্যাচের কেবলই দুই দিন শেষ হয়েছে। আর এরই মধ্যে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৩০৮ রানে এগিয়ে আছে ভারত। উইকেট আছে এখনও সাতটি।
এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার উইকেট পড়েছে ১৭টি। এই মাঠের ৯০ বছরের ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ড এটিই। অবশ্য গতকাল সকালেও বাংলাদেশের বোলারদের দাপট ছিল। সকালে ভারত প্রথম ইনিংসে শেষ চার উইকেট দ্রুত হারিয়ে অলআউট হয় ৩৭৬ রানে। আগের দিনের ৩৩৯ রানের সাথে আর মাত্র ৩৭ রান যোগ করতে পেরেছিল ভারত। কিন্তু জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৯ রানে। ২২৭ রানের লিড পাওয়া ভারত ফলো অন করায়নি বাংলাদেশকে। ব্যাটিং এ নেমে যায় তারা। দ্বিতীয় দিনশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ৮১ রান নিয়ে শেষ করে স্বাগতিকরা। সকালে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত দিনের শুরুতেই হারায় জাদেজাকে। আগের দিনের ৮৬ রানের সঙ্গে কোনো রান যোগ করতে পারেননি রবীন্দ্র জাদেজা। ১০২ রানে অপরাজিত থাকা রাভিচান্দ্রন অশ্বিন ফিরেন ১১৩ রানে। চারটি চারের সাহায্যে ৩০ বলে আকাশ দিপ করেন ১৭ রান। এই তিনটি উইকেটই নেন আগের দিন উইকেটশূন্য থাকা তাসকিন আহমেদ। পরে জাসপ্রিত বুমরাহকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন হাসান মাহমুদ। ভারতে প্রথমবার টেস্টে এই স্বাদ পেলেন বাংলাদেশের কোনো বোলার। ৮৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই হারায় সাদমান ইসলামকে। বুমরাহর বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ২২ রানের মাথায় জাকিরকে বোল্ড করে ফেরান আকাশ দিপ। তবে বাংলাদেশ বড় ধাক্কাটা খায় পরের বলে যখন প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফিরেন মোমিনুল। ভাল কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েও ব্যর্থ হলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মোহাম্মদ সিরাজের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে টাইগার অধিনায়ক ফিরেন ৩০ বলে ২০ রান করে। পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন মুশফিকুর রহিম ৮ রান করে। আর তাতেই বাংলাদেশ চলে যায় ব্যাকফুটে। এরপর হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাশ। কিন্তু ৫১ রানের বেশি যোগ করতে পারলেননা দুজন। জাদেজার পরপর দুই ওভারে ফিরলেন দুজন। সাকিব ফিরেছেন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩২ রান করে। আর লিটন ফিরেন ২২ রান করে। এরপর লড়াই করেছেন মিরাজ একাই। একপ্রান্ত আগলে রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অপরপ্রান্তে কেউই সঙ্গ দিতে পারেনি তাকে। ফলে ১৪৯ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ২৭ রান করে। ১১ রান করে আসে তাসকিন এবং নাহিদ রানার ব্যাট থেকে। ভারতের পক্ষে ৫০ রানে ৪ উইকেট নেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশ দিপ এবং রবীন্দ্র জাদেজা।
বাংলাদেশকে ফলো অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও ইয়াসাসভি জয়সওয়ালকে দ্রুতই ফেরান তাসকিন ও নাহিদ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে জাকির হাসানের ক্যাচে পরিণত করে ভারতীয় অধিনায়ককে ফেরান তাসকিন। প্রথম ইনিংসে ৬ রান করা রোহিত এই ইনিংসে করেন ৫ রান। আরেক ওপেনার জসওয়ালকে ফেরান নাহিদ রানা। তিনি করেন ১০ রান। ২৮ রানে দুই উইকেট হারানোর পর শুবমান গিল ও ভিরাট কোহলি তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ার ইঙ্গিত দিলেও তা জমে ওঠেনি। কোহলিকে ১৭ রানে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙ্গেন মিরাজ। ৩৭ বলে ১৭ রান করেন কোহলি। যদিও একটু পর টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল প্যাডে লেগেছিল কোহলির ব্যাট ছুঁয়ে। কিন্তু বুঝতে না পারায় রিভিউ নেননি তিনি। এরপর গিল দিনটা কাটিয়ে দেন রিশভ পান্তকে সঙ্গী করে। দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৮১ রান। শুভমান গিল ৩৩ রানে এবং রিশভ পান্ত ১২ রানে অপরাজিত রয়েছেন। এরই মধ্যে ৩০৮ রানে এগিয়ে যাওয়া ভারত আজ নিজেদের ইনিংসটাকে কতদূর নিয়ে যায় সেটাই এখন দেখার। তবে এটা পরিষ্কার রানের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।