আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, ‘পৌষের শীতে ভূত কাপে আর মাঘের শীতে বাঘ ডোরে’(গর্জন)। শীত আসে শীত যায় এটা স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃতির নিয়ম যা ঋতুর চক্রাকারে হতে থাকে। পৌষ গেল, মাঘ আইল শীতে কাঁপে বুক/দুঃখীর না পোহায় রাতি হইল বড় দুখ।’ গ্রামবাংলার এ প্রবাদ দুটো তুলে ধরে আমাদের দেশের অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের শীতকালীন দৃশ্য। সৃষ্টিকর্তার অপার ইচ্ছায় ও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পালাবদল ঘটে। এই পালা বদলের হাত ধরেই চলে আসল শীত। আর যত দিন যত যাচ্ছে শীতের দাপট ক্রমেই বাড়তে শুরু করছে। ধীরে ধীরে হিমশীতল কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে দেশ। শীত ধনী মানুষদের জন্য যেমন আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে, তেমনি অসহায় গরীব, হতদরিদ্র ও পথশিশুদের জন্য নিয়ে আসে দুঃখ দুর্দশা শীতবস্ত্রবিহীন দিন রাত কেটে যায় তাদের। কারণ তাদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমান শীতবস্ত্র থাকেনা। পথশিশুরা ও ফুটপাতে দিন কাটানো লোকেরা গরম কাপড়ের অভাবে এই শীতে তরতর করে কাঁপে। এমনকি তাদের শরীর ঢাকার জন্য কাপড় পর্যন্ত মিলে না। বিশেষ করে পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষেরা, এদের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। খোলা পরিবেশে নিদারুণ শীতে কাঁপতে থাকে কঙ্কালসার দেহ। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নজর দিতে হবে ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষ, শিশু ও বয়স্কদের প্রতি। মানবতার পাশে দাঁড়ানোই হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ। যা একজন মানুষকে উদার ও বড় করে তোলে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তাই গরিব–অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, আপনারা চলতি শীত মৌসুমে শীতার্ত গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পাড়া–মহল্লায় নতুন বা পুরোনো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণে অকাতরে সাহায্য–সহযোগিতা প্রদান করুন। আর সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীরা এ সকল শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সমপ্রসারিত করলেই এ থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সরবরাহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে দাঁড়ানোর মত মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এলেই শীত নিবারণের পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। আসুন, আমরা সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ববোধই হতে পারে অসহায়ের সহায়।
লেখক: তরুণ সাহিত্যকর্মী