হটস্পট বাংলাদেশ : সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৩ জুলাই, ২০২১ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির তৃতীয় তরঙ্গের আপাত সাম্প্রতিক অভিঘাত প্রায় দৃশ্যমান। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট-ডেল্টা-ফাঙ্গাস-আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের বিভিন্ন নতুন প্রকরণ সংক্রমণ-বিস্তার ও প্রাণনিধনের প্রবল তাণ্ডবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের জাতিরাষ্ট্র প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন ও গভীর শঙ্কায় নিপতিত। একদিকে ভ্যাকসিন আবিষ্কার-উৎপাদন-বিতরণ বাণিজ্যের কদর্য রাজনীতি এবং অন্যদিকে বিশেষ করে অনুন্নত-উন্নয়নশীল বিশ্বে অনাকাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন সঙ্কট জীবন-জীবিকার চালচিত্রে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করে চলছে। বিগত সময়ে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের নানামুখী কর্মকৌশল বাস্তবায়নে প্রভূত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সংক্রমণ ও প্রাণসংহারের পরিসংখ্যান এক ধরনের ভীতির ভয়ঙ্কর সঞ্চার বিস্তৃত হচ্ছে। সচেতন মহল সম্যক অবহিত আছেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যায়ে চীনের উহানে আবির্ভূত কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাস অল্প সময়ের মধ্যেই সমগ্র বিশ্বকে সংক্রমিত করে বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে অতি সহজেই বিপর্যস্ত করে তুলে।
২৮ জুন ২০২১ গণমাধ্যম সূত্রে অবগত হয়েছি যে করোনা অতিমারির এই ধরনের তাণ্ডব নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে ২০ হাজার বছর আগেই করোনা অতিমারির প্রাদুর্ভাব বিপুল সংখ্যক দেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। গবেষণার দাবি অনুযায়ী পূর্ব এশিয়া থেকে উদ্ভূত একাধিক করোনাভাইরাসের বিস্তার এবং এর স্বপক্ষে একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার’র প্রতিবেদনে উল্লেখ্য গবেষকদের বিশ্লেষণ ব্যাখ্যায় সে সময় পূর্ব এশিয়ায় মহামারির ব্যাপক প্রভাবের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আধুনিক চীন, জাপান এবং ভিয়েতনামের মানুষের ডিএনএ-তে এখনও সেই করোনা প্রজাতির ভাইরাসের অস্তিত্বের সন্ধান অনুভূত। সুদূর প্রাচীনকালের ভাইরাসের বিষয়ে জানা গেলে বিবর্তনমূলক তথ্য পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এরই ভিত্তিতে ভবিষ্যতে এই ধরনের অতিমারির পূর্বাভাস প্রক্ষেপণ সহজতর হবে। প্রাচীন করোনা প্রজাতির ভিন্ন কোন ভাইরাসের কারণেই পূর্ব এশিয়ায় প্রাচীন মানুষ এই মহামারির শিকারে পরিণত হয়।
‘কারেন্ট বায়োলজি’তে প্রকাশিত উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়াসিন সুইলমি ও রে তোবলারের গবেষণালব্ধ উপাত্তে পূর্ব এশিয়ায় বসবাসরত মানুষের ৪২ টি জিনে করোনাভাইরাস প্রজাতির জিনগত পরিবর্তনের প্রমাণ মিলেছে। গবেষকদের বক্তব্য সূত্রে আরও জানা যায়, তাঁরা বিশ্বের ২৬টি জাতির ২ হাজার ৫০০ এর বেশি জিন নিয়ে বিশেষ ধরনের বিশ্লেষণে ৪২ টি ভিন্ন জিনে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের সংকেত পেয়েছেন। তাঁদের ভাষায় ‘ভাইরাস ইন্টারেকটিং প্রোটিনসের (ভিআইপি)’ সংকেত প্রাপ্ত ৫টি জাতির সবাই পূর্ব এশিয়ার নাগরিক। তাঁরা এও দাবী করেছেন; উক্ত ভিআইপিগুলোর সঙ্গে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংযোগ ছিল এবং পরিপ্রেক্ষিত অনুধাবনে বর্তমান অতিমারির দ্রুততর সময়ের মধ্যে সর্বত্রই সংক্রমণের অদমনীয় বিস্তার সম্ভব হয়েছে।
ইউনিসেফ প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় অপরিহার্য জনস্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর সহজলভ্যতা ও ব্যবহারে ব্যাপক অপ্রতুলতায় বিগত বছর অতিরিক্ত প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার শিশু ও প্রায় ১১ হাজার প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর আশঙ্কার পূর্বাভাস ছিল। সমুদয় কারণে বিগত সালের শেষে দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিড-১৯ এর রোগির সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছে যায়। ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, ‘অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা বজায় রাখা ডব্লিউএইচওর কোভিড-১৯ মোকাবিলা কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই অঞ্চলের দেশগুলো অপরিহার্য সেবা প্রদান অব্যাহত রাখা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সেবাগুলো পুনরায় চালু করার প্রচেষ্টায় নজর দিচ্ছে, কারণ এসব সেবা ব্যাহত হলে প্রতিরোধযোগ্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে।’ প্রতিবেদনে আরও প্রকাশ পেয়েছে অতিমারি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ প্রতিপালনে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪২ কোটি শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। ৪৫ লাখ মেয়ের আর কখনো বিদ্যালয়ে ফেরা হবে না এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য-তথ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ কমে আসায় তারা বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউএনএফপিএ’র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক বিয়র্ন অ্যান্ডারসন এর ভাষায়, দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র-হতদরিদ্র-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য দীর্ঘকাল সময় প্রচলিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা-পুষ্টি ও টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ায় বৈষম্য গভীর হচ্ছে এবং এটি প্রসূতি মায়ের ও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া এই অঞ্চলে বাড়তি ৩৫ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি রয়েছে। প্রতিবেদনে অতিমারির কারণে বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধির মাত্রা জনস্বাস্থ্যকে আরও নাজুক করে তুলেছে বলে উল্লেখ করা হয়। অতিমারি শুরুর পর থেকে চালু করা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্পকে স্বাগত জানানো হলেও এসব প্রকল্পের নিগূঢ় মূল্যায়ন এবং দরিদ্রতম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য নগদ সহায়তা প্রদান কর্মসূচির উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ইতিমধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রজ্ঞাপিত বিধিনিষেধে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র-দুস্থ-অসচ্ছল ও কর্মহীন ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা প্রদানে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৬৪ জেলায় ২৩ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে।
২৩ জুন ২০২১ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করলে বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি শোচনীয় হতে পারে। সংস্থার মতানুুসারে, বাংলাদেশে প্রথম থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৩ শতাংশের মত হলেও গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায় মৃত্যু ও সংক্রমণ শনাক্তের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এপ্রিল ১৬, ১৭ তারিখে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন, ১৮ তারিখ ১০২ জন, ১৯ তারিখ ১১২ জন। ২৫ জুন এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৮ জনে এবং ২৭ জুন ১১৯ জনের মৃত্যু সর্বোচ্চ রেকর্ড স্থাপন করেছে। ২৯ জুন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৩৮৮ জন এবং শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২৪ শতাংশ। ২৯ জুন একই সূত্রমতে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়কালীন ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন শনাক্তের বিপরীতে ২৮ জুন দেশে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৬৪ জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয় যার হার ছিল ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ঐদিন সারা দেশে ৫৬৪ টি ল্যাবে ৩৫ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষাসহ এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয় ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৪০টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২৯ জুন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন এবং মোট সুস্থ হওয়ার রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং মৃত্যু হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
উল্লেখ্য সূত্রমতে, ২৮ জুন পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৭৯, ২০ দশমিক ৩২, ২২ দশমিক ৪৮, ২০ দশমিক ৬০, ৪২ দশমিক ২০, ৪৬ দশমিক ২৮, ৩৮ দশমিক ৭৫ এবং ৩০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেশে ৩৫টি জেলার মধ্যে করোনা শনাক্তের হার ৮টিতে ৫০ এবং বাকি ২৭টিতে ৩০ শতাংশের উপরে। ৫০ শতাংশের উপরের জেলাগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজার (৬৩.৫১), ফিরোজপুর (৭০.৭৬), মাগুরা (৯৫.৬৫), ঝিনাইদহ (৬৮.৭৫), যশোর (৫৬.৭৫), ঠাকুরগাঁও (৫৭.২১), পঞ্চগড় (৫৫.৩৫) ও মুন্সিগঞ্জ (৬৬.৬৬) এবং ৩০ শতাংশের উপরে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে – ফরিদপুর, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ি, টাঙ্গাইল, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুর, নাঠোর, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রণোদনা-সাহায্য-সহযোগিতা বিশেষ করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো যথার্থ অর্থে কার্যকর করা যাচ্ছে না। বিশিষ্টজনদের ধারণায় এর মূল কারণ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দুর্বল সমন্বয়। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং সহজবোধ্য প্রক্রিয়ায় উপস্থাপিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যগুলো দেশবাসী অবিচল আস্থার সাথে গ্রহণ করছেন বলেই ধারণা করা যায়। স্বাস্থ্য-পররাষ্ট্র-জনপ্রশাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থাগুলো থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তির বক্তব্যে লকডাউন-শাটডাউন, সীমিত-কঠোর, দিনক্ষণ-তারিখ ইত্যাদির ঘোষণা এবং বাচনিক বিষয়গুলো কেন জানি সাংঘর্ষিক ও বিভ্রান্তিমূলক মনস্তত্ত্ব নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তনশীল ও সামঞ্জস্যহীন কর্মপরিকল্পনা মানুষের গতিবিধি, নগর-গ্রাম-আঞ্চলিক স্থানান্তরে অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন জনগণ করোনা নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থাগুলো অবজ্ঞা করে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের কারণে তরুণ শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যা-হত্যা-মাদক সেবন-অসামাজিক অপকর্ম ইত্যাদি অপরাধ সংঘটনে অতিশয় দুরাশার দেয়াল তৈরি করছে।
সচেতনতাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রধান অনুষঙ্গ হলেও এর প্রায়োগিক কৌশলপত্র বাস্তব অর্থে সুফল বয়ে আনছে কিনা তার বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা আবশ্যক। শহরে বা গ্রামে গণমানুষকে পর্যাপ্ত সচেতন করার লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-জনপ্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাস্তবসম্মত সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই। গ্রাম-নগর নির্বিশেষে প্রত্যেক জনপদে তৃণমূল-প্রান্তিক পর্যায়ে মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডা কেন্দ্রিক কমিটিগুলোকে সচল করে এলাকার সচেতন নাগরিকের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। সামগ্রিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে পরিবার-সমাজ-পাড়াভিত্তিক সংক্রমিত ব্যক্তি-ঘর-অঞ্চলগুলোকে চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে এই সংক্রমণ বিস্তার রোধ কোনভাবেই সম্ভব নয়। যখন যেখানে যা প্রয়োজন কাঠামোগত পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। জনঅধ্যুষিত প্রত্যেকটি অঞ্চলকে জোনভিত্তিক বিভক্ত করে পর্যাপ্ত সচেতনতামূলক পন্থা অবলম্বন ও টিকা প্রয়োগ-যথাসময়ে টিকা সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা না গেলে সঙ্কট অধিকতর ঘনীভূত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
গার্মেন্টস বা অন্যান্য শিল্পকারখানা বা চলমান রাখা আর্থিক খাতগুলোকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিবিড় মনোযোগ-পর্যবেক্ষণ-তদারকি প্রয়োজন। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে; সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলোর অপ্রতুল লোকবল-সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে এককভাবে এর প্রতিরোধ দুরূহ বিষয়। আপামর জনগণের নি:স্বার্থ অংশগ্রহণ-সহমর্মিতা-সহযোগিতা-নিখাদ সমর্থন অবশ্যই এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মোদ্দাকথা সমন্বয়হীনতার অদক্ষতা-অযোগ্যতা ও দুর্বলতা সমূহকে সঠিক চিহ্নিতকরণ এবং প্রতিকার অনুসন্ধানে যথাযথ সমন্বয় সাধন অবধারিত। ‘জীবন সর্বাগ্রে’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্চারিত প্রতিপাদ্যকে পরিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে সকল ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ রেখে অপ্রয়োজনীয় অর্থব্যয়কে পরিহার করে সঞ্চিত সেসব অর্থ-বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধকরণে বিনিয়োগকৃত অর্থ প্রবাহের প্রণিধানযোগ্য উদ্দেশ্য হোক করোনা প্রতিরোধের সমৃদ্ধ ও সমুচিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা। যদিও সমকালীন সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান ঊর্ধ্ব-নিম্নমুখী দোলাচলে আবর্তিত, উল্লেখ্য কর্মযজ্ঞ সুচারুরূপে সম্পন্নে সমন্বিত প্রয়াস ব্যতিরেকে করোনা মুক্তির বিকল্প কোন বিধান বর্তমান সময়ে প্রজোয্য নয়- সচেতন মহলের এই ধারণাটুকু মোটেও অযৌক্তি বা অমূলক নয় বলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্নীতি মুক্ত সমাজ
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে