হজ্জ আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ অভিপ্রায় বা সংকল্প করা, কোথাও যাবার ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে মক্কার কাবা ঘর এবং তার সংলগ্ন কয়েকটি স্থানে ইসলামের বিধান অনুযায়ী অবস্থান করা বা জিয়ারত করাকে হজ্জ বলে।
হজ্জ সকল বিশ্বাসীদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘হে জনগণ! তোমাদের জন্য হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ সম্পাদন কর।’ (আবু হুরায়রা)। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে, ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাবা ঘরে হজ্জ করা ওই সকল মানুষের জন্য ফরজ, যারা যাতায়েত এর সামর্থ রাখে।’ (সূরা আল ইমরান:৯৭)।
এই পবিত্র হজ্জ এর মূল উদ্দেশ্য তিনটি:
প্রথমত: জীবনে কৃত সকল অন্যায়, পাপ, খারাপ কাজের জন্য আল্লাহর নিকট মাফ চাওয়া বা তওবা করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে, ‘তোমরা (হজ্জ পালনকারীগণ) আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আল্লাহতালা মাফ করে দেন, তিনি বড়ই দয়ালু।’ (সূরা বাকারা:১৯৯)। এ প্রসঙ্গে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করেন, সে হজ্জ থেকে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়।’ (আবু হোরায়রা, বুখারী, মুসলিম, মাজহারি)
দ্বিতীয়ত: তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নিকট প্রতিজ্ঞা করা যে, আর কখনোই ভুল করবে না, অন্যায় করবে না, খারাপ কাজ করবে না এবং আল্লাহতাআলার নির্দেশনার বাহিরে যাবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ‘তোমরা (হজ্জ পালনকারীগণ) পাথেয় সংগ্রহ কর। বস্তুত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহ ভীতি। অতএব হে জ্ঞানী গণ! তোমরা আমাকে ভয় কর।’ (সূরা বাকারা: ১৯৭)
তৃতীয়ত: হজ্জের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বোধ গড়ে উঠবে। মানুষের চিন্তা, চেতনা, বোধ, আবিষ্কার, সভ্যতা ইত্যাদির আদান–প্রদান হবে এবং এর মাধ্যমে পুরা বিশ্ব সকল উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধা সমানভাবে উপভোগ করবে এবং বিশ্ব একটি শান্তিময় বিশ্ব গ্রাম বা এষড়নধষ ঠরষষধমব হিসাবে গড়ে উঠবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ্য আছে যে, ‘আমি কাবা গৃহকে মানব জাতির মিলন কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি।’ (সূরা বাকারা:১২৫)।
আমাদের সকলকে বিষয়টি বুঝতে হবে যে, ‘মুক্তির এক মাত্র পথ পাপ বর্জন, শুধু সওয়াব অর্জন নয়।’ আর হজ্জ আমাকে সুযোগ করে দিচ্ছে আমার কৃত পাপের জন্য আল্লাহতালার নিকট ক্ষমা চেয়ে পাপমুক্ত হওয়া। হজ্জ এর মাধ্যমে আমি আল্লাহতায়ালার নিকট শপথ করছি যে জীবনে আর কখনোই কোন পাপ করব না অর্থাৎ মিথ্যা কথা বলবো না, চুরি করব না, ঘুষ খাব না, কাউকে ঠকাবো না, কোনো ধান্দাবাজি করব না, আল্লাহর সৃষ্টির কোনো ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করব না ইত্যাদি। আমি বিশ্বাস করি যে এই শপথ ভঙ্গ হলে হজ্জতো হবেই না, বরং আল্লাহ চরম অসন্তষ্ট হতে পারেন। এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন জাতি–গোষ্ঠির বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে নিজের আত্মিক ও বৈষয়ক উন্নয়ন ঘটানো এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব গড়ে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা।
হজ্জ নামক এই অসাধারণ কর্মকাণ্ড আন্তরিকভাবে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য হজ্জ সম্পর্কিত ইতিহাস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নিয়ম–কানুন জানা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে হজ্জ করা মানেই আমাদের জীবন পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। কেননা হজ্জ করে আমি নিজেকে পাপমুক্ত করেছি বলে বিশ্বাস করেছি এবং মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত কোনো অন্যায় বা খারাপ কাজ বা কারো ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকবো বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আল্লাহতালা আমাদের সকলকে হজ্জ এর অর্থ বুঝার, তা অনুধাবন করার, তা অনুসরণ করার এবং এর মর্যাদা রক্ষা করার তৌফিক দান করুন।
লেখক: অধ্যক্ষ, লিডার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ চট্টগ্রাম, বিএসপি, এসজিপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি (অব)।