হকারদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

| মঙ্গলবার , ২২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর হকারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ফুটপাতে হকারদের বসার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারণ করা সময় অনুযায়ী, সকালে হকার বসতে পারবে না। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসতে হবে তাদের। বিষয়টিকে পর্যায়ক্রমে ইভনিং মার্কেটে রূপ দেওয়া হবে। পাশাপাশি হকার পুনর্বাসনের জন্য রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন জায়গা এবং জহুর হকার্স মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। গত রোববার সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং হকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার স্থান পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের হকারদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার কথা জানান তিনি। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে হকারদের পুনর্বাসন ও হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ না করে বুঝিয়ে কাজ আদায়ের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। এ সময় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি খালনালায় পড়ে প্রাণহানি এড়াতে চসিকের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তিনি।

ডা. শাহাদাত বলেন, হকাররা সকালবেলা ফুটপাতে বসতে পারবে না। ধাপে ধাপে এটা আরও গোছানো হবে। ভবিষ্যতে এটাকে ইভনিং মার্কেট হিসেবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা বিকাল ৫টা থেকে চেয়েছিলাম। তারা অনুরোধ করায় ৩টা করা হয়েছে। হকার পুনর্বাসনে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, হকার পুনর্বাসনের জন্য দুটি নির্দিষ্ট জায়গা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। প্রথমটি হলো জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। যেখানে বর্তমানে কিছু অপরাধী চক্র, মাদক ব্যবসায়ী ও আসক্তদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। সেটা মুক্ত করে আমরা চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। সেখানে হকারদের বসানো যেতে পারে, যেখানে অবশ্যই রেলওয়ে রাজস্ব পাবে।

বিশ্লেষকরা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের অনেক স্থাপনা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এছাড়া ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ হকারদের দৌরাত্ম্য তো আছেই। ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের পথ। সেখানে হকার বসার কারণে পথচারীদের বাধ্য হয়ে সড়কের পাশ ধরে হাঁটতে হচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে সড়ক প্রশস্ত করার পরেও তার এক চতুর্থাংশ হকারদের দখলে চলে যায়। দখলের কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। ফলে রাস্তাতেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে অপচয় হয় মূল্যবান কর্মঘণ্টা। তাই নগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয়ে ভ্রাম্যমাণ হকারদের তালিকা করে তাদের অন্যত্র পুনবার্সন করে, পথচারীদের চলাচলের নিরাপত্তা সুরক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি যানজট লাঘবেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা ও জঞ্জালমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি সিটি কর্পোরেশন থেকে অনেক বার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বিগত সিটি নির্বাচনের সময়ও মেয়রসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ফুটপাত হকারমুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও ফুটপাত যেমন ছিল তেমনই আছে। যদিও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ভূমিকাকে আমরা প্রশংসা করছি। ফুটপাত মুক্ত হওয়ার পরিবর্তে নতুন করে দখল চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।

সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তাঁরা বলেন, ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না।

অভিযোগ আছে, ফুটপাত একটি পক্ষের একটি মধুচক্র। এই মধুচক্রে রক্ষিত টাটকা মধুর লোভ সংবরণ করা কঠিন। প্রশাসনের লোকজন এ লোভ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারেন না। ফুটপাত যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্যই। তাই পথচারীদের এই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাওয়া জরুরি। আমরা চাই দখলমুক্ত ফুটপাত। তারজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে কঠোর ভূমিকা পালন করা হচ্ছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। চালাতে হবে নিয়মিত অভিযান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে