একজন প্রকৃত হকার হতে চায় সাগর। এখন তাকে প্রকৃত হকারদের কাছ থেকে পত্রিকা কিনে বিক্রি করতে হয়। এই বয়সে সে বুঝে গেছে, প্রকৃত হকার হতে পারলে তার আয় আরো বাড়বে। সে আরেকটু ভালোভাবে মায়ের চিকিৎসা করাতে এবং বোনের মুখে হাসি ফুটাতে পারবে।
সাগরের বসবাস পাহাড়তলীর আমবাগান এলাকার লাইজুর কলোনিতে। মা, ছোট ভাই এবং ছোট বোনকে নিয়ে তাদের সংসার। সাগরের বাবা সেকান্দর তরকারি বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে ট্রাক চাপায় তিনি মারা যান। ছোটবোন আকলিমা বাপকে দেখেনি। বাপ যখন মারা যান তখন সে মায়ের পেটে। অপর ভাই রাফিও ছোট। বাপের আকস্মিক মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা নুরুন্নাহার। কিন্তু কিছুদিন পর তার ডান পাশের কিডনিতে টিউমার ধরা পড়ে। শারীরিক নানা জটিলতায় তিনি তেমন কাজ করতে পারেন না।
বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের দায় পুরো চলে আসে সাগরের কাঁধে। সে কী করবে? কীভাবে বাঁচবে? কীভাবে ভাইবোনদের বাঁচাবে? চোখে–মুখে অন্ধকার দেখছিল। একবার ভিক্ষা করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু নিজেকে কোনোভাবেই ভিক্ষুক হিসেবে ভাবতে পারে না। ভিক্ষা করতে তার ভালো লাগে না। তাই সে হকার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হকারদের কাছ থেকে পত্রিকা কিনে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করতে শুরু করে। হকারের কাছ থেকে এক–দুইশ কপি পত্রিকা একসাথে কেনার ফলে দাম কিছুটা কম পায়। তাই গড়ে দুইশ পত্রিকা বিক্রি করে সে দুইশ টাকা আয় করে। পত্রিকার ‘প্রকৃত হকার’ হয়ে সরাসরি পত্রিকা এনে বিক্রি করতে পারলে আয় যে আরো বেশি সেটা বুঝে গেছে।
প্রতিদিন ভোরে ছোট বোন আকলিমাকে নিয়ে সাগর নগরীর জিইসি মোড়ে চলে আসে। সেখানে হকারের কাছ থেকে পত্রিকার লিখিত মূল্যের চেয়ে এক টাকা কমে পত্রিকা কিনে নেয়। পরিচিত হকার তাকে বাকিতে পত্রিকা দেন। পরে পথচারীদের কাছে পত্রিকাগুলো বিক্রি করে। দিন শেষে কোনোদিন ১শ, কোনোদিন ২শ টাকা আয় হয়। ওই টাকায় বাজার করে বোনকে নিয়ে বস্তিতে ফিরে যায়। শুধু কি বাজার? প্রতি মাসের বাসাভাড়া বাবদ ২৭শ টাকা রাখতে হয় সবকিছুর আগে। মাথা গোঁজার ঠাই না থাকলে অসুস্থ মা, ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব? উল্টো প্রশ্ন করে সাগর।
সাগর যেখানে যায় ছোট বোনকে সাথে নিয়ে যায়। বোনকে সে আগলে রাখে। ‘প্রকৃত হকার’ হতে পারলে বোনকে স্কুলে ভর্তি করাবে বলে জানাল সে।