সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | মঙ্গলবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

সড়কমহাসড়কে নিত্য দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহতনিহতের ঘটনা ঘটছে। সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য অদক্ষ অনভিজ্ঞ চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল, অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং, চলন্ত গাড়িতে চালকদের ধূমপান এবং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক অনেকটা দায়ী। গত ১২ আগস্ট পটিয়ায় বাইপাস সড়কে ভাটিখাইনের করল এলাকায় দ্রুতগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে অপর একটি প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১২ জন গুরুতর আহত হন। ত্রুটিপূর্ণ এই বাইপাস সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর আগে পটিয়া ইন্দ্রপোল থেকে চক্রশালার আগে পটিয়া নতুন বাস স্টেশন পর্যন্ত যে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে তাতে যাত্রীদের সময় বাঁচবে এবং চট্টগ্রামকক্সবাজার সড়কে দূরত্ব কমে আসবে এ আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাইপাস সড়ক আশানুরূপ প্রশস্ত হয়েছে ঠিক, কিন্তু এই সড়কে নির্মিত ছোট বড় কালভার্ট ও সেতুগুলো বেশ ত্রুটিপূর্ণ। অন্তত ১০/১২ টি সেতু সড়কের সাথে এডজাস্ট হয়নি। সড়কের চেয়ে সেতু উঁচু হওয়ায় গাড়িগুলোকে বেশ ধকল সইতে হচ্ছে। বাইপাস সড়কে গাড়ি তীব্র বেগে চললে পেছনের যাত্রীরা বেশ লাফিয়েহাঁপিয়ে ওঠে। তখন যাত্রীরা বেশ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সমস্বরে হইচই করে ওঠে। সাধারণত সড়ক এবং সেতুর মধ্যে যে স্বাভাবিক সমউচ্চতা ও সমান লেভেল থাকা দরকার তা এই পটিয়া বাইপাস সড়কে নেই। ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ও সেতুর কারণে কোনো গাড়িতে রোগী থাকলে তারাও কষ্ট পাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দোহাজারী সাতকানিয়া আমিরাবাদ সড়কে অনেকগুলো উঁচু উঁচু স্পিড ব্রেকার। তাও যেন যাত্রীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। স্পিড ব্রেকারগুলো পার হবার সময় পুরো শরীর নাড়া দিয়ে ওঠে। সব দেশে আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পিড ব্রেকার কমিয়ে আনা হচ্ছে। সেখানে চট্টগ্রামপটিয়াচন্দনাইশদোহাজারীআমিরাবাদ সড়কে স্পিডব্রেকারের আধিক্য কেন তা আমাদের বুঝে আসে না। অনেক সময় ওই রুটে নতুন চালকরা স্পিডব্রেকারের সংকেত খেয়াল না করে গাড়ি জোরে চালিয়ে নেন। এতে যাত্রীদের বেশ ধকল পোহাতে হয় এবং গাড়িও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যাত্রীদের দাবি, দক্ষিণ চট্টগ্রামে বেপরোয়া গাড়ি চলাচল থামাতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ বাইপাস রোডে বিদ্যমান সেতুগুলোকে ত্রুটিপূর্ণমুক্ত করতে হবে। বাইপাস সড়কে দুই রাস্তার মাঝখানে যে মিডিয়ান রাখা হয়েছে তা একটি ভালো পদক্ষেপ। সব সড়ককে এ ধরনের বিভাজক বা মিডিয়ানের আওতায় এনে মুখোমুখি গাড়ি চলাচল স্থায়ীভাবে থামাতে হবে। অপ্রশস্ত সড়কগুলো প্রশস্ত করতে হবে, যেন মুখোমুখি দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। সড়কগুলো নিয়মিত তদারকি করে নির্বিঘ্নে গাড়ি যাতায়াতের পথ তৈরি করতে হবে। তবেই কমবে প্রাণহানি। সড়ক দুর্ঘটনা নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। ত্রুটিপূর্ণ মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো গাড়ি সড়কে চলাচল করতে দেয়া যাবে না। সবচেয়ে বেশি দরকার প্রতিটি মহাসড়ক ২ লেন বা ৪ লেনের পরিবর্তে ৬ লেন করা। চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করার যে গণদাবি উঠেছে সরকারকে তা বাস্তবায়নে হাত দিতে হবে শীঘ্রই। অন্যদিকে অদক্ষ লাইসেন্স ছাড়া চালকদের দিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চলাচল থামাতে হবে। বেপরোয়া গতির গাড়ি চলাচলের কারণে প্রাণহানির ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। মোটামুটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং, বেপরোয়া গতিতে চলাচল, চালকের মোবাইলে কথা বলা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা ইত্যাদির সুরাহা করতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের জীবন অনেক দামি ও মূল্যবান। সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে আগামী দিনে একজনের জীবনও যেন বিপন্ন না হয়। সময়ের চেয়ে,সড়কে গতিময়তার চেয়ে জীবনের দাম অনেক বেশিসবাই যেন এটা মনে রাখেন।

শাহ আমানত সেতু গোলচত্বর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২১ টি রুটে যাত্রীবাহী বিভিন্ন বাস চলাচল করে। কিন্তু ওই রুটগুলোতে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছে না। যাত্রীরা নিত্য হয়রানির শিকার। বিশেষ করে দোহাজারী, সাতকানিয়া, কেরানীহাট, আমিরাবাদ, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী রুটে বিভিন্ন পরিবহনে নিত্য যাত্রী হয়রানি ও হেনস্তা দিনের পর দিন বাধাহীনভাবে চলে আসছে। হানিফ, ঈগল, নাবিল, পূরবী, পূর্বাণী, এসআরসহ নানা নামের পরিবহনগুলো প্রতিনিয়ত যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে। পরিবহনের চালককন্ডাক্টরহেলপাররা সুযোগ বুঝে যাত্রীসংখ্যা বেশি দেখলে দ্বিগুণতিনগুণ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে।

বেশির ভাগ সময়ে বেশি ভাড়াই গুনতে হয় যাত্রীদের। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া না দিলে গন্তব্যে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দেখা যায়, যে পরিমাণ টাকা বলে গাড়িতে উঠানো হয়েছে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। বেশি ভাড়া হাতিয়ে নেয়াই এদের বদভ্যাস। দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের এই জিম্মিদশা থেকে কবে পরিত্রাণ মিলবে তা কেউ জানে না। যাত্রীদের নিয়ে বাস মালিকচালকদের এই স্বেচ্ছাচারিতা ও জুলুম চলবে আর কতোকাল?

লেখক: সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধতুমি ফিরে যাবে
পরবর্তী নিবন্ধএবার প্রয়োজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন