খুব কম সময়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করা আইরিশ লেখক স্যালি রুনি (Sally Rooney) তাঁর প্রজন্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচিত। তাঁর উপন্যাসগুলো সমসাময়িক সম্পর্ক, শ্রেণি এবং রাজনৈতিক চেতনার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
স্যালি রুনি ১৯৯১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি মায়ো–এর ক্যাসলবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেন এবং সেখানে তিনি একজন অত্যন্ত সফল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০১৩ সালে তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিস ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা ডিবেটার হয়েছিলেন।
সমপ্রতি স্কাই আর্টস সাহিত্য তার নতুন বই ‘ইন্টারমেজোর’ জন্য পুরস্কার দিয়েছে। তাঁর পক্ষ থেকে প্রকাশক পুরস্কার নেন। গ্রেফতারের আশংকায় তিনি সে পুরস্কার নিতে যুক্তরাজ্য যাননি।
লেখিকা হিসেবে তাঁর প্রথম উপন্যাস, ‘কনভারসেশনস উইথ ফ্রেন্ডস’ (Conversations with Friends), ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি তাঁকে সাহিত্য জগতে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। কিন্তু বিশ্বজুড়ে তাঁকে খ্যাতি এনে দেয় তার দ্বিতীয় উপন্যাস, ‘নরমাল পিপল’ (Normal People), যা ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইটি দুই তরুণ–তরুণী–মরিয়ান শেরিডান এবং কনেলের ওয়ালড্রনের জটিল সম্পর্ক এবং বড় হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে লেখা। এটি আইরিশ বুক অ্যাওয়ার্ডস–এ ‘উপন্যাস অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননা লাভ করে এবং পরে সফল একটি টিভি সিরিজেও রূপান্তরিত হয়।
রুনির লেখার বিশেষত্ব হলো তার স্বল্পবাক গদ্য (sparse prose), যা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখার সঙ্গে তুলনীয়। তিনি সমসাময়িক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ইমেল ও টেক্সট মেসেজকে, তাঁর লেখায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করেন। তাঁর উপন্যাসগুলোর চরিত্রগুলো সাধারণত শিক্ষিত কিন্তু আর্থিকভাবে অনিশ্চিত থাকে–যা রুনি তার প্রজন্মের একটি সাধারণ বাস্তবতা বলে মনে করেন। তাঁর লেখায় সবসময়ই শ্রেণি ও রাজনৈতিক চেতনার একটি গভীর ছাপ থাকে; তিনি নিজে একজন স্ব–ঘোষিত মার্কসবাদী এবং তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস তাঁর কাজেও প্রতিফলিত হয়।
‘নরমাল পিপল’ এবং ‘কনভারসেশনস উইথ ফ্রেন্ডস’–এর পরে ২০২১ সালে তৃতীয় উপন্যাস ‘বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড, হোয়্যার আর ইউ’ (Beautiful World, Where Are You) এবং ২০২৪ সালে ‘ইন্টারমেজো’ (Intermezzo) প্রকাশিত হয়। মাত্র ত্রিশের কোঠায় থাকা সত্ত্বেও স্যালি রুনি বিশ্ব সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তিনি তার সময়ের তরুণদের ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামকে সাহিত্যিক রূপ দিয়ে চলেছেন।
‘নরমাল পিপল’ স্যালি রুনি–র দ্বিতীয় উপন্যাস, যা ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরই দ্রুত বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই বইটি কেবল রুনিকে তার প্রজন্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেনি, বরং এর ব্যাপক বাণিজ্যিক ও সমালোচনামূলক সাফল্য রুনিকে মিলিনিয়র উপন্যাসের লেখকদের সারিতে এনে দেয়।
উপন্যাসটি আয়ারল্যান্ডের দুটি ভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে আসা দুই তরুণ–তরুণী, মরিয়ান শেরিডান (Marianne Sheridan) এবং কনেল ওয়ালড্রন (Connell Waldron)-এর জটিল ও দীর্ঘকালীন সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
মরিয়ান তার স্কুলে একজন বহিরাগত, যিনি মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ কিন্তু বুদ্ধিমত্তা ও স্পষ্টবাদীতার জন্য পরিচিত। অন্যদিকে, কনেল একজন জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ এবং সামাজিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য তরুণ। তাদের সম্পর্কের শুরু হয় গোপনীয়ভাবে, যখন কনেলের মা মরিয়ানদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন।
রুনি তার লেখার চিরায়ত বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এই উপন্যাসেও শ্রেণি এবং সামাজিক চাপ–এর সূক্ষ্ম অথচ গভীর প্রভাব তুলে ধরেছেন। কলেজে যাওয়ার পর তাদের সামাজিক অবস্থান পাল্টে যায়–মরিয়ান বুদ্ধিজীবী মহলে মিশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, আর কনেল নিজেকে কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক ও বিচ্ছিন্ন মনে করতে শুরু করে। এই পরিবর্তনশীল সামাজিক প্রেক্ষাপট তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে আরও জটিল করে তোলে।
উপন্যাসটি আধুনিক সম্পর্কের অনিশ্চয়তা, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে তুলে ধরেছে। মরিয়ানের পারিবারিক সমস্যা এবং কনেলের মানসিক চাপের সাথে তাদের একে অপরের প্রতি গভীর টান ও নির্ভরশীলতা কাহিনিটিকে একটি বাস্তবসম্মত কিন্তু কাব্যিক মাত্রা দিয়েছে।
রুনির জন্ম ১৯৯১ সালে আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি মায়ো–এর ক্যাসলবারে।
তাঁর বাবা টেলিকম এইরান (Telecom Eireann)-এ একজন টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর মা একটি আর্টস সেন্টার (শিল্পকলা কেন্দ্র) চালাতেন।