রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন নামে একজনকে কুপিয়ে খুনের পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আউয়াল। কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া সুমন ঘটনার পর সাবেক এমপি আউয়ালকে ফোন করে জানান ‘স্যার ফিনিশ’। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। আর এ কিলিং মিশনে সুমনের নেতৃত্বে সরাসরি ১০ থেকে ১২ জন অংশ নেন। যারা প্রত্যেকেই ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় গা ঢাকা দেন। ঘটনা তদন্তের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২০ মে) ভোরে ভৈরবে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী আউয়ালকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। একইসঙ্গে চাঁদপুর ও পটুয়াখালীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে মো. হাসান ও জহিরুল ইসলাম বাবু নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। খবর বাংলানিউজের।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দীন নামে একজনকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই ঘটনায় গত ১৭ মে নিহত সাহিনুদ্দীনের মা মোসা. আকলিমা রাজধানী পল্লবী থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৪ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব সদর দপ্তর ও র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার (১৯ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। আর বৃহস্পতিবার ভোরে ভৈরব সদর এলাকা থেকে এক নম্বর আসামি আউয়াল ও বাউফল পটুয়াখালী থেকে জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের বরাতে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বর্ণনায় র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। ঘটনার ৪ থেকে ৫ দিন আগে দুপুর বেলা আউয়ালের কলাবাগান অফিসে তাহের (২ নম্বর আসামি) ও সুমন (৩ নম্বর আসামি) হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। মাঠ পর্যায়ে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য সুমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সহযোগী হিসেবে আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত ছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ মে সুমন, বাবুসহ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন বৈঠক করেন। গত ১৬ মে বিকেলে ঘটনাস্থলে তারা জড়ো হন। তারপর ভিকটিম সাহিন সন্তানসহ ঘটনাস্থলে এলে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০ থেকে ১২ জন এলোপাথাড়িভাবে ধারারো অস্ত্র দিয়ে পর্যায়ক্রমে সাহিনকে আঘাত করতে থাকেন। শেষ পর্যায়ে মনির শরীরের উপরের অংশে এবং মানিক হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ওই সময় বাবুসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লুকআউট ম্যান হিসেবে নজরদারি করেন। হত্যাকাণ্ডটি ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হয়। ঘটনা শেষে সুমন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আউয়ালকে মোবাইলে ফোন করে জানান ‘স্যার ফিনিশ’ এবং তাদের আরও অল্প কিছুক্ষণ কথা হয়। পরে জড়িতরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আউয়ালের বিভিন্ন ব্যবসা, জমি দখল ও কাজের সঙ্গে জড়িত সুমন। আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দীনের জমি নিয়ে যখন বনিবনা হচ্ছিল না, তখন সুমনদের ক্ষোভ ছিল সাহিনুদ্দীনকে মেরে ফেলার। ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আউয়াল ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা শিকার করেছেন। আউয়ালের আলীনগর প্রকল্পে সাহিনুদ্দীনের বেশ কিছু জমি রয়েছে। নিহত সাহিনুদ্দীন আউয়ালকে তার জমি দিতে রাজি হননি। এদিকে সুমনকে ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
আউয়াল একজন আবাসন ও জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করতেন। এজন্য আউয়ালের থেকে তারা মাসিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পেতেন এবং ক্ষেত্র বিশেষ কাজ অনুয়ায়ী অতিরিক্ত টাকা পেতেন। এ সন্ত্রাসী দল দিয়ে সুমন এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন।