ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডরিখ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আবিষ্কারক। তিনি ১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল জার্মানির সাঙনী রাজ্যের মিশেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ক্রিশ্চিয়ান গটফ্রিড হ্যানিম্যান, মা জোহানা ক্রিশ্চিয়ানা। স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় বাবা–মায়ের কাছ থেকে। ১৭৬৭ সালে তিনি মিসেনের টাউন স্কুলে ভর্তি হন। তিনি লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও কম সুযোগ সুবিধার জন্য অস্বস্তি বোধ করেন তিনি। এরপর তিনি ১৭৭৯ সালে এরল্যাঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় ডক্টরেট অব মেডিসিন বা এম.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১১টি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি একজন নামকরা অনুবাদক ছিলেন। রসায়নবিদ হিসেবেও ছিলো তার সুখ্যাতি। তিনি সর্ব প্রথম পারদ এর শক্তিকরণ ও ব্যবহার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৭৮১ সালের শেষ দিকে তিনি ম্যাগডিবার্গের নিকটবর্তী গোমেরন এ জেলা মেডিকেল অফিসার নিযুক্ত হন। এসময় তিনি প্রচলিত অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার কুফল ও অসারতা উপলব্ধি করে তার বিভিন্ন প্রবন্ধ ও বইতে এ বিষয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। ১৭৮৪ সালের দিকে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে দেবার পর হ্যানিম্যান লেখনী ও অনুবাদকের কাজ করে কষ্টেসৃষ্টে তার জীবন নির্বাহ এবং পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধে বর্ণিত চিকিৎসাগত অসঙ্গতি বের করার কাজ শুরু করেন।
তিনি তাঁর দীর্ঘ গবেষণায় এ মর্মে উপনীত হলেন ‘যা একজন সুস্থ ব্যক্তির উপর প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন লক্ষণ সমষ্টির উৎপন্ন করতে পারে, তা একই রকম লক্ষণ সমষ্টি সমৃদ্ধ অসুস্থ দেহে প্রয়োগ করলে নিরাময় করতে সক্ষম এটাই ‘লাইক কিউর লাইক’ যা একটি নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচেষ্টা এবং তিনি এর নাম দেন হোমিওপ্যাথি। ১৮০৭ সালে হুফেলান্ড জার্নাল এ প্রকাশিত ইন্ডিকেশনস অব দ্যা হোমিওপ্যাথিক ইমপ্লয়মেন্ট অব মেডিসিনেস ইন অর্ডিনারি প্র্যাকটিস নামে এক প্রবন্ধে ‘হোমিওপ্যাথি’ শব্দটি হ্যানিম্যান প্রথম ব্যবহার করেন। হ্যানিম্যান ১৮০৫ সালে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চালু করেন।
১৮১০ সালে চিকিৎসা নিয়মাবলী সংক্রান্ত গ্রন্থ অর্গানন অব রেসনাল হেলিং আর্ট জার্মানি ভাষায় প্রকাশ করেন যা পরবর্তীকালে ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ নামে প্রকাশিত হয়। তিনি ১৮১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হতে ১৮২১ সাল পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। ১৮৪৩ সালের ২ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।