কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক সবারই প্রিয় মিহির স্যার স্মরণে ‘জ্ঞানালোয় উদ্ভাসিত মিহির কান্তি শীল’ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হলো, যা একটি মহৎ কাজ। এটি সম্পাদনা করেছেন অজয় শীল। তাঁর মেধা, পরিশ্রম, উদারতা এবং আত্মগর্ব ত্যাগী অনবরত কর্মনিষ্ঠার ফসল এ স্মারক গ্রন্থ।
এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৭৬। লিখেছেন মোট ৬৯ জন। এর মধ্যে প্রথমে ‘প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের চোখে’ শিরোনামের মধ্যে লিখেন ৪০ জন।
এক নজরে আকর্ষণীয় সূচিপত্র দেখে বইটি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকেবহাল হওয়া যায়। সম্পাদকের নিবেদন এবং লেখাগুলো সকলের জানার পরিধি বিস্তৃত করে। চার দশকের বেশি সময় ধরে মিহির স্যার কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। স্যার স্কুলের শিক্ষক এবং কোমল প্রাণ শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জ্ঞানের আলোয় প্রভাব বিস্তার করেন। সম্পাদক এখানে আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী তুলে ধরেছেন। পুত্র হওয়ার সুবাদে তিনি স্যারের (পিতার) মধ্যে সে মহান গুণগুলো দেখেছেন। সংক্ষিপ্ত জীবনী শেষে (১৯৮৮–২০২৩) কাছে থেকে দেখা শিরোনামে লিখেছেন অজয় শীল। এরপর সমসাময়িক সহকর্মী থেকে ৫ জন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের প্রধান থেকে ৬ জন, সহপাঠী এবং শুভাকাঙক্ষী থেকে ৪ জন, পরিবার পরিজনদের চোখে শিরোনামের মধ্যে ৫ জন লিখে মোট ৬৪ জন স্মারক গ্রন্থকে সমৃদ্ধ করেন। একসাথে লেখকদের সকলের ফটো সংযোজন করাতে দৃষ্টিনন্দন হয়েছে বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো। এছাড়া আরো ৫ জন কবিতা ও ছড়া লিখেছেন স্মারক গ্রন্থে। এভাবে মোট ৬৯ জনের লেখা প্রবন্ধ–নিবন্ধ–স্মৃতিকথাসহ মিহির স্যারের বিভিন্ন লেখা নিয়ে আলোচনা এবং স্যারকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া স্থান পেয়েছে স্মারক গ্রন্থে।
‘স্মরণে মননে মিহির কান্তি শীল’ শিরোনামের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী স্মরণসভা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থী এবং শুভাকাঙক্ষীদের শ্রদ্ধা জানানোর অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে ২৩ জনের প্রতিক্রিয়া এসেছে।
৩০ নভেম্বর ২০১১ সালে কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় আবদুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠিত হয় মিহির স্যারের বই ‘অনন্ত ভাবনা’–এর প্রকাশনা উৎসব। কৃতবিদ্য মিহির স্যারের সমাপনী বক্তব্য অর্থাৎ প্রকাশনা উৎসবে প্রদত্ত ভাষণ স্মারক গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গ্রন্থালোচনা শিরোনামের মধ্যে ‘অনন্ত ভাবনা’–এর উপর আলোচনা এসেছে। এছাড়া বদরুননেসা সাজু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন – ‘মিহির স্যারের জ্ঞানগর্ভ খনি মহতি সৃজনশীলতা অনন্ত ভাবনা’ –এই শিরোনামে।
মিহির স্যারের টিভি সাক্ষাৎকার অন্যচোখে স্মারক গ্রন্থভুক্ত হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচনায় ছিলেন অন্যান্যদের সাথে মিহির স্যার এবং অধ্যাপক পঙ্কজ দেব অপু। প্রতি প্রশ্নের উত্তরে চমৎকার বলেছেন মিহির স্যার। সেখানে তিনি নিজের লেখা কবিতা ফাগুণের শপথ আবৃত্তি করেন। ডায়েরির পাতা থেকে অধ্যায়ে সংযোজন করা হয়েছে স্যারের অগ্রন্থিত কবিতাবলী, এরপর দিনলিপি। যাপিত জীবনে বিভিন্ন সময়ে স্যারের লেখা তথ্যবহুল দিনলিপি। দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীসহ স্যারের কিছু চিঠিপত্র এখানে সংযোজন করা হয়েছে। স্কুলের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে চিঠিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পাদক অজয় শীল যত্ন সহকারে এগুলো তুলে এনেছেন স্যারের স্মারক গ্রন্থে। অগ্রন্থিত কবিতার মধ্যে স্যারের রচনাকাল দেখে ভাবছি, সত্যি কী নিখুঁত কাজ! একদিকে নয়, সকলদিকে!
স্মারক গ্রন্থে বাণী সংকলন–স্যারের ডায়েরী এবং অনন্ত ভাবনা বই থেকে সংকলিত বাণীর সমাহার। এগুলো প্রত্যেক মানুষের জন্য উপকারী এবং মূল্যবান। শিক্ষা বিষয়ক বাণীগুলো সম্পাদক আলাদাভাবে দেখিয়েছেন।
জ্ঞানালোয় উদ্ভাসিত মিহির কান্তি শীল স্মারক গ্রন্থের পরবর্তী চ্যাপ্টারে দেখা যাচ্ছে স্যারের মৃত্যু পরবর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত শোক ও শ্রদ্ধার নিদর্শন – শোকাঞ্জলি। নথিপত্রে সংযুক্ত হয়েছে স্যারের পেশাগত জীবনের কিছু নথি, শিক্ষা অর্জনের কয়েকটি সনদপত্র। স্মৃতির এলবামে অনেকগুলো ছবি বিধৃত করেছেন সম্পাদক। ভাগ করে বা পৃথকভাবে বিশদ বিবরণ সহ ছবিগুলো দেয়াতে সকলের বুঝতে সুবিধা হয়। সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে অমলিন মিহির স্যার সবার সাথে কর্মময় স্কুলে। এভাবে পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের অনেকগুলো ফটো এসেছে স্মারক গ্রন্থে। বইয়ের ফ্লাপে স্যারের পরিচিতি সহ কিছু লিমেরিক সংযুক্ত করা হয়েছে। মজবুত বাইন্ডিংয়ের শেষ মলাটে স্কুলের ছবি এবং ছবির উপরে স্যারের স্মরণীয় বাণীটি বইয়ের মান আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঐ বাণীটির মধ্যে শিক্ষক সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে। সকল কিছু মিলে সম্পাদকের সম্পাদকীয় গুণে জ্ঞানালোয় উদ্ভাসিত মিহির কান্তি শীল স্মারক গ্রন্থ উন্নত পূর্ণাঙ্গ অবিস্মরণীয় বইয়ের স্বরূপে অপূর্ব রূপ–লাবণ্য পেয়েছে বলে এটি বিশেষ মর্যাদার দাবীদার। এটির মুখবন্ধ লিখেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাচিন্তক ও নৃ–গবেষক ড. শামসুদ্দিন শিশির। পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন স্যারের সহধর্মিণী মালতী দেবী। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা। আমি এ বইয়ের বহুল প্রচার কামনা করি।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক; সাবেক বিভাগীয় প্রধান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ,
মহিলা কলেজ চট্টগ্রাম।