স্বেচ্ছাশ্রমের সাঁকোতে দীর্ঘ বছর পার, সেতু হবে কবে

রাঙ্গুনিয়ার শিয়ালবুক্কা গ্রাম

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | বুধবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ও রাজানগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্কা গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। শিয়ালবুক্কার বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবন জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ইছামতি পার হতে হয়। তাই নিজেদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে চলাচল করে আসছেন এই গ্রামের কয়েক সহস্রাধিক মানুষ। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে গড়া বাঁশের সাঁকো প্রতিবছর বর্ষার ঢলে ভেসে যায়। তখন বাসিন্দাদের পারাপারে রশি টানা নৌকা একমাত্র ভরসা। এভাবে ভাঙাগড়ার মাঝেই দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি স্থায়ী একটি ব্রিজ নির্মাণ। অথচ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস ছিলো দীর্ঘ বছর ধরে। একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হয়ে এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই শিয়ালবুক্কাবাসির।

সরেজমিনে দেখা যায়, পারুয়া ডিসি সড়ক ফুলবাগিচা এলাকা থেকে খালের অপর প্রান্তে দেখা যায় শিয়ালবুক্কা গ্রাম। এপারে রাজানগর ওপারে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের মাঝে ইছামতি নদী। দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগে এ নদীই বাধা। এ বাধা দূর করতে গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের অর্থে উপকরণ সংগ্রহ করে বাঁশের সাঁকো বানাচ্ছেন। সকাল থেকে কর্মযজ্ঞ শুরু করে কাজ চলে বিকাল পর্যন্ত। এই কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দেন গ্রামের শত শত বাসিন্দা। দিন শেষে সাঁকো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে এ সাঁকো পার হয়ে কৃষক, শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামের বাসিন্দাদের তাদের প্রাত্যহিক প্রয়োজন সারতে দেখা গেছে।

উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের খরস্রোতা ইছামতি নদীর পশ্চিম পাশে শিয়ালবুক্কা গ্রাম। তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসলাদি এবং প্রাত্যহিক কাজে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি দিয়েই যাতায়াত করেন। অন্যদিকে শিয়ালবুক্কায় একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর বাকী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর অপর পাড়ে। সেখানে গিয়েই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হয়। গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করুণ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় অসুস্থদের।

স্থানীয় মোহাম্মদ রবিউল হোসেন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করা গেলেও প্রতি বর্ষায় সাঁকোটি পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেসে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে সাঁকোটি তলিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন ফের চাঁদা তুলে সাঁকোটি নির্মাণ করেন। বর্ষাকালে এই নদী বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে। বাঁধভাঙা বন্যায় দুই কূল ভেসে যায়। তখন একমাত্র অবলম্বন নৌকা। জীবনকে হাতে নিয়ে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এখানে জীবন চলে। এছাড়া আর কোনো উপায় নাই। এই অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই।

স্থানীয় রবিজ আহমদ বলেন, ছেলেমেয়েরা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। বর্ষাকালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পিলার দিয়ে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করলে এলাকার লোকজন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারত। কৃষক নবাব মিয়া বলেন, ভোটের সময় সব নেতাই সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোটের পর তারা আর সেতু নির্মাণ করে দেন না। অনেক জনপ্রতিনিধি বড় বড় সভায় এখানে ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু মুখের কথা মুখেই থেকে গেলো, বাস্তবায়ন হয়নি।

রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, শিয়ালবুক্কায় ইছামতি খালের ওপর স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব এলজিইডির মাধ্যমে বহু আগে পাঠানো হয়েছে বলে জেনেছি। কিন্তু দীর্ঘ বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে সমপ্রতি এলজিইডি কতৃপক্ষ পরিদর্শনে এলে বাঁশের সাঁকোর অদূরে বড়ুয়াপাড়া এলাকা দিয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করেন। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, সাঁকোর স্থানেই যেনো ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, এই স্থান দিয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সমপ্রতি নতুন করে পরিদর্শন করে এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ঊর্ধ্বতন মহলে প্রেরণ করা হয়েছে। এই নিয়ে ডিসি অফিসেও আলোচনার রেজুলেশন হয়েছে। আশাকরি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে শিয়াকবুক্কা ব্রিজ নির্মাণ কাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের চারটি সরকারি কলেজ ‘এ’ ক্যাটাগরির
পরবর্তী নিবন্ধইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য পর্ষদের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জয়লাভ